Email : esaharanews@gmail.com
  • অন্যান্য
নোটিফিকেশন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সুলতানি যুগের ভারতের শাসকগোষ্ঠী

ESARA NEWS
অক্টোবর ৬, ২০২৩ ৭:০০ অপরাহ্ণ । ৫১ জন
Link Copied!

‘সুলতানি যুগের ভারতের শাসকগোষ্ঠী’

সুলতানি যুগের ভারতে অভিজাতরা সবচেয়ে প্রভাবশালী সামাজিক গোষ্ঠী ছিলেন, তাঁরাই ছিলেন তখনকার শাসকগোষ্ঠী। ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদেরকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে – খান, মালিক ও আমীর। তবে সুলতানি যুগে এই শ্রেণী বিভাজন খুব একটা স্পষ্ট ছিল বলা চলে না। তখন রাজদরবারের বেশ কিছু পদাধিকারী – সরজনদার (সুলতানের ব্যক্তিগত বাহিনীর অফিসার), সাকি-ই-খাস (তত্ত্বাবধায়ক), এবং সিপাহশালার (সর-ই-খাইল) প্রমুখরা আমীর বলে গণ্য হতেন। বস্তুতঃ সুলতানি যুগে আমীর শব্দটি সরকারি প্রভাবশালী ব্যক্তিকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হত। সেকালের অভিজাততন্ত্রের মধ্যে – খান ও মালিকরা সবচেয়ে প্রভাবশালী শ্রেণী ছিলেন, আলোচ্য যুগে খান ও মালিকরাই সুলতানি প্রশাসনের অধিকাংশ উচ্চপদগুলি অধিকার করে রেখেছিলেন। মিনহাজ ও বারানি তাঁদের লেখায় সেকালের অভিজাতদের যে তালিকা দিয়েছিলেন, তাতে শুধু মালিকদের নামই পাওয়া যায়। অন্যদিকে তখন মোঙ্গল বাহিনীতে দশ হাজার সৈন্যের পদাধিকারীকে খান বলা হত। কিন্তু দিল্লি সুলতানিতে খান একটি বিশেষ পদমর্যাদাসূচক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হত; উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, সুলতান বলবনের উপাধি ছিল উলুগ খান, এবং একজন শাহজাদা হিসেবে মহম্মদ বিন তুঘলকের উপাধিও ছিল উলুগ খান। তখনকার অভিজাতদের অন্যান্য উপাধিগুলি ছিল খাজা-জাহান, ইমাদ-উল-মুলক, নিজাম-উল-মুলক প্রভৃতি। সুলতানরা অভিজাতদের অনেক কিছু উপহার দিতেন, সেগুলির মধ্যে জমকালো পোশাক, ঘোড়া, তরবারি, পতাকা, ঢাক প্রভৃতি প্রধান ছিল। সুলতান প্রদত্ত সেইসব পারিতোষিকের বিশেষ মূল্য ছিল; ওসবের মাধ্যমে সুলতানি প্রশাসনে একজন অভিজাতের অবস্থান, এবং সুলতানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নির্দিষ্ট হত। সুলতানরা বিশেষ অনুষ্ঠানের সময়ে অভিজাতদের হাতি ও ঘোড়া উপহার দিতেন। তবে আলোচ্য সময়ে সুলতানি শাসনের সঙ্গে যুক্ত অভিজাতদের সংখ্যা নিশ্চিতভাবে ইতিহাস থেকে জানা যায় না। মিনহাজ সিরাজ তাঁর লেখায় সুলতান ইলতুৎমিসের ৩২ জন অভিজাতের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সমকালীন মধ্য এশিয়া থেকে বিতাড়িত ৮ জন শাহজাদা ছিলেন। বারানি তাঁর লেখায় সেকালের চল্লিশ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি অভিজাত গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেছিলেন (তুরকান-ই-চিহ্নলগনি)। ঐতিহাসিকদের মতে সেই ‘চল্লিশা’ খুব সম্ভবতঃ সুলতান ইলতুৎমিসের উচ্চপদস্থ অভিজাতরা ছিলেন। বারানি জানিয়েছিলেন যে, সুলতান বলবনের সময়ে দিল্লি সুলতানিতে অভিজাতদের সংখ্যা ছিল ছত্রিশ জন; তাঁরা সকলেই মালিক ছিলেন, কাজীদের তিনি নিজের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন। সুলতান আলাউদ্দিনের সময়ে দিল্লি সুলতানিতে উচ্চপদে আসীন অভিজাতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ জন হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে সাতজন আবার আলাউদ্দিনেরই নিকট আত্মীয় ছিলেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, আলাউদ্দিনের মৃত্যু পর্যন্ত দিল্লি সুলতানিতে অভিজাতদের সংখ্যা খুব একটা বেশি ছিল না, তখন তাঁরা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ছিলেন। এরপরে তুঘলক আমলে সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ ঘটবার পরে অভিজাতদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই ক্ষুদ্রায়ত গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল স্বার্থদ্বন্দ্ব ছিল, জাতিগত ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক তাঁদের মধ্যে প্রবল বিরোধের সৃষ্টি করেছিল। তুর্কিরা মনে করতেন যে, তাজিক, খলজী, আফগান ও হিন্দুস্তানিদের থেকে তাঁরা বেশি শ্রেষ্ঠ। ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পরে তুর্কিরা তাজিকদের বিতাড়িত করে সুলতানি প্রশাসনের ক্ষমতা একচেটিয়াভাবে ভোগ করতে শুরু করেছিলেন। এরপরে খলজীরা দিল্লি সুলতানির ক্ষমতা দখল করে সেই ব্যবস্থার পতন ঘটিয়েছিলেন; তাঁদের সময়ে অভিজাতদের মধ্যে তাজিক, আফগান, মোঙ্গল ও হিন্দুস্তানিরা জায়গা পেয়েছিলেন। বস্তুতঃ খলজী আমল থেকেই ব্যক্তিগত প্রতিভা সুলতানি প্রশাসনের উচ্চপদে আরোহণের মাপকাঠি হয়ে উঠেছিল, এবং জাতিগত আধিপত্যের যুগের সমাপ্তি ঘটেছিল। ইবন বতুতা জানিয়েছিলেন যে, দিল্লির সুলতানরা বিদেশী অভিজাতদের মর্যাদা দিতেন; তাঁর সময়ের সুলতানি যুগের ভারতে তাঁরা সামাজিক মর্যাদা ভোগ করতেন।
ইতিহাস থেকে সুলতানি অভিজাতদের সামাজিক উৎপত্তির কথা বিশেষ কিছুই জানা যায় না; তবে একথা অবশ্যই জানা যায় যে, গোড়ার দিকে সুলতানি প্রশাসনে সামাজিক গতিশীলতা অবশ্যই ছিল। তখন বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মানুষ নিজের সামরিক দক্ষতা দেখিয়ে অথবা কোনভাবে সুলতানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিজাততন্ত্রে নিজের জায়গা করে নিতেন, এবং তারপরে সুলতানি প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে উন্নীত হতেন। সুলতানি যুগের অনেক অভিজাত তাঁদের প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন, তারপরে তাঁরা ধীরে ধীরে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন করেছিলেন। মূলতঃ খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকে সেই ধারাটি বেশ সচল ছিল। সেই সময়ে দিল্লির সুলতানিতে রাজবংশের উত্থানপতন চলেছিল, তখন কোন এক রাজবংশের পতন ঘটলে সেই বংশের অনুগৃহীত অভিজাতরাও ক্ষমতাচ্যুত হতেন। সেই সময়কার অভিজাতরা এক প্রজন্মের বেশি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকতে পারতেন না। খলজী ও তুঘলক বংশীয় সুলতানদের আমলে অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে বহু সম্প্রদায়ের মানুষ স্থান পেয়েছিলেন; ফলে দিল্লি সুলতানির সামাজিক ভিত্তি সম্প্রসারিত হয়েছিল, এবং সেটি স্থিতিশীল হয়েছিল। খলজী, আফগান ও হিন্দুস্তানিরা তখন সুলতানি প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন, তবে তুর্কিরাও বাদ পড়েন নি। সুলতানি যুগে অভিজাতরা ক্ষমতাচ্যুত হলেও তাঁদের সামাজিক মর্যাদা কিন্তু হ্রাস পেত না, কিছুকাল পরে হয়ত তাঁরা আবার ক্ষমতা ফিরে পেতেন। সেকালের অভিজাত ও উলেমারা ছিলেন আশরাফ শ্রেণীর মুসলমান, তাঁরাই তখন মুসলিম সমাজের উচ্চতম ও সম্মানিত শ্রেণী ছিলেন; তাঁদের নীচে ছিলেন আতরাফরা। সুলতানি যুগে রাষ্ট্রই অভিজাতদের কর্মসংস্থান, তাঁদের বিধবাদের পেনসন দান ও কন্যাদের বিবাহের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করে দিত।
সেকালের অভিজাতরা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ছিলেন – শস্ত্র ব্যবসায়ী (আহল-ই-সইফ), এবং বুদ্ধিজীবী (আহল-ই-কলম)। সুলতানি যুগের বুদ্ধিজীবীরা মূলতঃ বিচারক ও যাজক হিসেবে কাজ করতেন, উলেমারা সেই বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ভারতে সুলতানি যুগের গোড়ার দিকে বিদ্রোহী প্রধান, মুকাদ্দম ও কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করাই সুলতানি রাজ্যের প্রধান কাজ ছিল। ইতিহাসের সেই পর্বের রাষ্ট্রব্যবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিশেষ কোনো ভূমিকা ছিল না; তবে তখন একথা অবশ্যই আশা করা হত যে, সুলতানের উজির একজন বুদ্ধিজীবী হবেন। সুলতানি যুগের অভিজাতরা বুদ্ধিজীবীদের অবজ্ঞা করতেন, তাঁরা তাঁদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাজের অনুপযুক্ত বলে গণ্য করতেন। কাজী মুঘি সুলতান আলাউদ্দিনকে মোঙ্গলদের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের পরামর্শ দিলে সুলতান তাঁকে রাষ্ট্রের সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যাপারে উপদেশদানের জন্য ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছিলেন। কাজী মুঘি একজন কেরানির পুত্র ছিলেন। সেকালে আশরাফদের মধ্যে থেকেই অভিজাতদের গ্রহণ করা হত। সেই কারণে সুলতানি যুগের অভিজাততন্ত্রের মধ্যে স্থিতিশীলতা আসলেও মুসলমান সমাজে শ্রেণী বিভাজন বৃদ্ধি পেয়েছিল। তৎকালীন মুসলিম সমাজে আজলাফরা (আতরাফ) ছিলেন (কাম আসল) তাঁতি, কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ। এই দুই শ্রেণীর মধ্যে তখন বিবাহ ও আহার-বিহার চালু ছিল না। মুসলিমদের মধ্যে ওই ধরনের বিভাজন তৎকালীন মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার সমাজে প্রচলিত থাকলেও, ঐতিহাসিকদের মতে মধ্যযুগের ভারতে প্রচলিত জাতিব্যবস্থার পটভূমিতেই মুসলমানদের মধ্যে সেই জাতিবিভাজন দেখা দিয়েছিল। সুলতানি যুগের ভারতে শুধুমাত্র আশরাফ বা উচ্চবর্গের মুসলমানদেরই শাসনকার্যের ব্যাপারে যোগ্য ও দক্ষ বলে বিবেচনা করা হত। সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক যোগ্যতার ভিত্তিতে নিম্নবর্গের হিন্দু ও মুসলমানদের (মদ প্রস্তুতকারক, তাঁতি, নাপিত, মালি, দোকানি ইত্যাদি) সুলতানি প্রশাসনের উচ্চপদে বসানোর পরে সেকালের উচ্চবর্গের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। নানা কারণে সুলতানি প্রশাসনে মহম্মদ বিন তুঘলকের পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছিল। তাঁর পরে সুলতান ফিরোজ তুঘলক শুধুমাত্র রাজকীয় অভিজাত ও উচ্চবর্গের মানুষদের মধ্যে থেকে অভিজাতদের মনোনীত করেছিলেন, এবং তিনি তাঁর কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন। সেকালের অভিজাতরা হিন্দুস্তানিদের অভিজাততন্ত্রে অন্তর্ভুক্তির বিরোধী ছিলেন না, কিন্তু তাঁরা যেকোন ধরণের নিম্নবর্গের মানুষকে অভিজাত পদ দানের বিরোধী অবশ্যই ছিলেন। ফিরোজ তুঘলকের প্রধানমন্ত্রী খান-ই-জাহান তাঁর প্রথম জীবনে একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন, সেজন্য তাঁর বিরুদ্ধে অভিজাতদের তেমন কোন আপত্তি ছিল না। সুতানি যুগের ঐতিহাসিক বারানিও মিশ্র সম্প্রদায় বরদুদের সুলতানি প্রশাসনের উচ্চশ্রেণীতে গ্রহণের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাঁরা সেই সময়কার নিম্নবর্গের ধর্মান্তরিত মুসলমান ছিলেন, সুলতান আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পরে তাঁরা অল্পসময়ের জন্য দিল্লি সুলতানির ক্ষমতা দখল করতে পেরেছিলেন।
বারানির লেখা থেকে জানা যায় যে, সুলতানি যুগে অভিজাতদের কাছে তেমন কিছু সঞ্চয় থাকত না। ফলে কোন কারণে অর্থের অভাব ঘটলে তাঁরা হিন্দু শাহ ও মুলতানি বণিকদের কাছ থেকে অর্থ ধার করতেন। তাঁদের ইকতার আয় থেকে মহাজনেরা ঋণের জন্য বরাত পেতেন, এবং সব সম্পদ তাঁদের ঘরে গিয়েই মজুত হত। সুলতান আলাউদ্দিন ভূমিরাজস্ব সংগ্রহের কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা গড়ে তোলবার পরে সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছিল। তুঘলকদের আমলেও সেই একই ব্যবস্থা চালু ছিল। সেই সময় থেকে সরকার নগদ অর্থে রাজস্ব সংগ্রহ করতে শুরু করেছিল, এবং ইকতা ও খালসা – সব জমি থেকেই নগদে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ইবন বতুতাকে পাঁচ হাজার দিনারের বিচারকের পদ দেওয়া হয়েছিল, সেজন্য তাঁকে আড়াইটি গ্রামের রাজস্ব নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। সুলতানি যুগের একজন মালিক সাধারণতঃ বাৎসরিক পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা বেতন পেতেন, এবং একজন আমীর বাৎসরিক তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা বেতন পেতেন। সুলতান ফিরোজ অভিজাতদের বেতন ও ভাতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর উজির খান-ই-জাহান মকবুল বছরে তেরো লাখ টাকা বেতন ও অন্যান্য ভাতা পেতেন। ফিরোজের সময়ে অন্যান্য অভিজাতরা বার্ষিক গড়ে চার থেকে আট লাখ টাকা বেতন পেতেন। এর অর্থ হল যে, তখন শাসকগোষ্ঠীর হাতে কৃষি উদ্বৃত্তের অনেকটাই কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। অভিজাতরা সেটার একাংশ ব্যয় করতেন, এবং বাকি অংশ মজুত করে রাখতেন। ফিরোজের অভিজাত মালিক শাহিন সুলতানের নায়িব আমীর-ই-মজলিশ ছিলেন। তিনি তাঁর মৃত্যুকালে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা, মণিমুক্তো ও দামী পরিচ্ছদ রেখে গিয়েছিলেন। সেকালের আরেকজন আমীর বসির সুলতানি তেরো কোটি টাকা রেখে মারা গিয়েছিলেন, সুলতান তার মধ্যে নয় কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় খাতে বাজেয়াপ্ত করে নিয়েছিলেন। তবে সেগুলি তখনকার ব্যতিক্রমী ঘটনা ছিল। বস্তুতঃ সুলতানি যুগে অভিজাতদের সম্পদ সঞ্চয়ের ফলে দেশে মুদ্রা-নির্ভর অর্থনীতির সম্প্রসারণ ব্যাহত হয়েছিল। শেষে তুঘলক আমলে সুলতানি রাষ্ট্রে মুদ্রা-নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠবার পরে অভিজাতদের বাণিজ্য ও বণিক সম্প্রদায় সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছিল। ইবন বতুতা জানিয়েছিলেন যে, দিল্লির সুলতানদের নিজস্ব বাণিজ্যপোত ছিল। সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক তাঁর বন্ধু শিহাবুদ্দিন কাজরুনিকে তাঁর তিনটি ব্যক্তিগত জাহাজ বাণিজ্য করবার জন্য দিয়েছিলেন। কাজরুনির বিস্তৃত বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল, তুঘলক যুগে তাঁকে ‘বণিক সম্রাট’ (King of merchants) বলে অভিহিত করা হত। তুঘলকদের আমলেই বণিকদের সুলতানি প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। মহম্মদ বিন তুঘলক শিহাবুদ্দিনকে ক্যাম্বে (খামবয়াত) বন্দরের গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। ইবন বতুতা জানিয়েছিলেন যে, মহম্মদ বিন তুঘলক একটা সময়ে তাঁকে উজির পদ দানের জন্য মনস্থির করেছিলেন, এবং তৎকালীন উজির খান-ই-জাহানের ষড়যন্ত্রের ফলেই বিন তুঘলক নিহত হয়েছিলেন। তাঁর লেখা থেকে আরো জানা যায় যে, ইরাকের বণিক আবুল হাসান ইবাদী, মহম্মদ বিন তুঘলকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বাণিজ্য করতেন। তিনি ইরাক ও খোরাসান থেকে সুলতানের জন্য নানা ধরণের অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য পণ্য কিনতেন। সেকালের অভিজাতরা সুলতানকে বিভিন্ন দিক থেকে অনুসরণ করতেন। তুঘলক যুগের অভিজাতরা বাণিজ্যের চেয়ে উদ্যান স্থাপনে বেশি আগ্রহী ছিলেন, সুলতান ফিরোজের অভিজাতরা অনেক উদ্যান তৈরী করেছিলেন। সুলতানি যুগের অভিজাতদের শিক্ষা-দীক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ইতিহাস থেকে বিশেষ কিছু জানা যায় না। তবে সম্ভবতঃ তাঁরা অশিক্ষিত ছিলেন না, তাঁরা শিক্ষিত ক্রীতদাস ক্রয় করতেন। সেই ক্রীতদাসদের ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হত। সুলতানি যুগের অভিজাতদের নিজস্ব একটি সাংস্কৃতিক জীবন ছিল। তাঁদের মধ্যে অনেকেই সাহিত্য, নৃত্য ও সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন; তাঁরা সেকালের কবি ও সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষণ করেছিলেন। তাঁদের সাহায্যেই ভারতে ইন্দো-মুসলিম সংস্কৃতির নতুন একটা ধারা গড়ে উঠেছিল। সুলতানি যুগের অভিজাতরাই সেই সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তবে সেই ধারার গঠনে সুলতানি যুগের ভারতের সূফীদেরও অনেক অবদান ছিল। সুলতানি যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক জিয়া নাখসাবি অনেক বিষয়ে গ্রন্থ ও কবিতা লিখেছিলেন; এছাড়া তিনি অনেকগুলি প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থকে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। মূলতঃ শস্ত্র ব্যবসায়ী হলেও সুলতানি যুগের অভিজাতরা সংস্কৃতিকে কিন্তু অবহেলা করেননি।
তুর্কিদের ভারতে আগমনের প্রাক্কালে রাজপুতরা ভারতের শাসকশ্রেণী ছিলেন। ভারতে তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে রাজপুতরা উত্তর ভারতের একটা বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে স্থানীয় শাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। সুলতানি যুগে তাঁদের রায়, রাণা, রাবাত, আবার কখনো কখনো প্রধান বা সর্দার বলে অভিহিত করা হত। তাঁদের সশস্ত্র অনুচর বাহিনী ছিল, তাঁরা গ্রামের দুর্গে অনুচর পরিবেষ্টিত হয়ে বাস করতেন। সমগ্র সুলতানি যুগে তাঁদের সংখ্যা ঠিক কত ছিল, সেটা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়; তবে সেকালের ইতিহাস থেকে যেটা বলা যায় সেটা হল যে, দেশের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় তাঁদের প্রাধান্য ছিল। সমকালীন মুসলমান ঐতিহাসিকেরা তাঁদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন; তাঁরা বিভিন্ন সুলতানকে তাঁদের বিরুদ্ধে জেহাদ করবার জন্য পরামর্শ দিলেও সুলতানরা কিন্তু কখনো তাঁদের সঙ্গে স্থায়ী শত্রুতার সম্পর্ক বজায় রাখেননি। সুলতানি যুগে তাঁরা সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব সময়মত মিটিয়ে দিলে, এবং সরকারের প্রতি অনুগত থাকলে সাধারণতঃ তাঁদের উৎখাত করা হত না। সময়ের সাথে সাথে হিন্দু প্রধান ও তুর্কি শাসকদের মধ্যে ক্রমশঃ রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, হিন্দু রায়রা প্রায় একশো ক্রোশ পথ অতিক্রম করে সুলতান বলবনের রাজসভার জাঁকজমক দেখতে আসতেন। বলবন বাংলার বিদ্রোহী শাসক তুঘ্রিলকে খাঁকে দমন করে অযোধ্যায় ফিরে আসবার পরে সেখানকার হিন্দু রায়রা তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। সুলতান ফিরোজের বাংলা অভিযানকালে পূর্ব-উত্তরপ্রদেশের কয়েকজন হিন্দু প্রধান তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে গোরখপুর ও চম্পারণের রায় উদয় সিং প্রধান ছিলেন। তিনি সুলতান ফিরোজের কোষাগারে কুড়ি লক্ষ টাকার রাজস্বও জমা দিয়েছিলেন। কারার গভর্নর মালিক ছজ্জু সুলতান জালালুদ্দিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করবার পরে স্থানীয় হিন্দু রায় ও রাবাতরা তাঁর পক্ষে যোগ দিয়েছিলেন; এরপরে ছজ্জু পরাজিত হলে হিন্দু রায়রা জালালুদ্দিনের সঙ্গে আপস করে নিয়েছিলেন। জালালউদ্দিনের রাজদরবারে নিয়মিতভাবে তাঁদের দেখা পাওয়া যেত। ফিরোজ তুঘলকের রাজসভায় সেকালের হিন্দু প্রধান অনিরাথু, রায় মদর, রায় সুমের, রাবাত অধিরাম ও অন্যান্যরা উপস্থিত থাকতেন। সুলতানের রাজসভায় তাঁদের আসনগ্রহণ করবার অধিকার ছিল। তবে সুলতানি প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপিত হলেও সেইসব হিন্দু গ্রাম প্রধানদের অস্তিত্ব কিন্তু বরাবরই অনিশ্চিত থেকে গিয়েছিল। সুলতানরা সুযোগ পেলেই তাঁদের উৎখাত করতে ছাড়তেন না; অনেক সময়ে কেন্দ্ৰীয় রাজস্বব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটিয়ে তাঁরা তাঁদের ক্ষমতা ও অধিকারও কেড়ে নিতেন। সেটার ফলে সুলতানি যুগের কৃষকদের দেয় করের পরিমাণ না কমলেও গ্রাম প্রধানদের সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই কমে গিয়েছিল; একই সাথে তাঁদের অধীনস্থ মধ্যস্বত্বভোগীদের অধিকারও সঙ্কুচিত হয়েছিল। সুলতানি যুগের ভারতে খৃষ্টীয় চতুৰ্দশ শতকের গোড়া থেকেই জমিদারদের কথা জানতে পারা যায়। তখন বংশানুক্রমিক মধ্যস্বত্বভোগীদের বোঝানোর জন্যই জমিদার শব্দটি ব্যবহার করা হত। আমীর খসরু তাঁর লেখায় জমিদারদের কথা বলেছিলেন। সুলতানি যুগে খুত, মুকাদ্দম ও চৌধুরীরা ছিলেন জমিদার। তখন জমি জরিপ করে যাঁদের রাজস্ব ধার্য করা হত, এমন মধ্যস্বত্বভোগীকেও জমিদার বলা হয়েছিল। তাঁরা থোক রাজস্ব জমা দেওয়ার অধিকারী ছিলেন না। পরবর্তী মুঘল যুগে মূলতঃ জমিদার বলতে কৃষি উদ্বৃত্তের স্থায়ী অংশীদারকে বোঝানো হয়েছিল; তখন জমির মালিক বা কৃষি উদ্বৃত্তের একাংশের মালিক – সকলেই জমিদার বলে গণ্য হয়েছিলেন। সুলতানি যুগে গ্রামের প্রধানদেরও জমিদার বলা হত। তবে তাঁদের জীবনযাত্রার মান তখন কেমন ছিল, ঐতিহাসিক তথ্যের অভাবে সেকথা বলা সম্ভব নয়। কিন্তু একথা অবশ্যই বলা যেতে পারে যে, সেকালের দরিদ্র জনগণের জীবনযাত্রার সঙ্গে তুলনায় তাঁরা যে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতেন, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
সুলতানি যুগে অভিজাতদের সহযোগী শাসকগোষ্ঠী ছিল; তাঁরা রাজস্ব, প্রশাসন, ধর্ম ও বিচার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কাজী ও মুফতিরা সেকালের ধর্ম ও বিচার সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনা করতেন, তখনকার প্রত্যেক শহরে তাঁদের দেখা পাওয়া যেত। শরিয়ত অনুযায়ী তাঁরা মুসলমানদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিচার করতেন। হিন্দুদের প্রথাগত আইন ও ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী বিচার করা হত। তখন প্রধান কাজীর আলাদা পদ ছিল। সেকালের অনেক শহরে দাদবক নামের একটি সরকারি পদ ছিল। সেই পদাধিকারীরা বিভিন্ন অত্যাচারমূলক কর সম্পর্কে অনুসন্ধান ও মুসলমানদের সম্পত্তি ইত্যাদির তদারকি করতেন। তখন কর ধার্যের জন্য সে সবের হিসেব রাখা হত, মূলতঃ সুলতানি যুগের আমীরেরা সেসব কাজে নিযুক্ত থাকতেন। আলোচ্য সময়ে কোতোয়ালের অধীনস্থ মুহতাসিবরা মুসলমানরা যাতে শরিয়তের নির্দেশ পালন করেন সেদিকে নজর রাখতেন। সুলতানি যুগে মুসলমানরা ঠিকমত রোজা, নামাজ ইত্যাদি পালন করছেন কিনা, সেসবের দিকে মুহতাসিবদের নজর রাখতে হত। এছাড়া বাজারে ওজন ও পরিমাপ ব্যবস্থার তদারকিও তাঁদের হাতে ন্যস্ত ছিল। ওই সব পদাধিকারীরা সরকারি বেতন পেতেন; ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা বাড়বার পরে ওই পদের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছিল। সুলতানি যুগের ভারতে মসজিদে ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা ছিলেন, এছাড়া কোরান পাঠকের দল ছিলেন। সমাধিস্থলে বা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তাঁরা কোরান পাঠ করত। উলেমারা তখন মক্তব ও মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হতেন। সুলতানি যুগের উলেমারা সামাজিক সম্মান পেতেন। তাঁদের মুসলিম আইন, তর্কশাস্ত্র, ধর্মশাস্ত্ৰ ইত্যাদি বিষয়ে উচ্চ-শিক্ষিত হতে হত; এবং ভালোভাবে আরবি ও ফার্সি জানতে হত। সেকালের মুসলিম পণ্ডিত, সূফী ও দরবেশরা রাষ্ট্র থেকে নানাধরনের অনুদান পেতেন। তবে তাঁদের সামাজিক উৎসের কথা নিশ্চিতভাবে ইতিহাসে জানা যায় না। ঐতিহাসিকদের মতে তৎকালীন ভারতের মুসলিম সমাজের মধ্যবর্তী বা নিম্নমধ্যবর্তী স্তরে তাঁদের অবস্থান ছিল। সেকালের কয়েকজন উলেমা সুলতানি প্রশাসনে উচ্চপদ পেয়েছিলেন, এছাড়া বিভিন্ন সময়ে তাঁরা কাজী ও প্রধান কাজীর পদেও নিজেও ছিলেন, তাঁরাও সেযুগের শাসকগোষ্ঠী ছিলেন। সুলতানি যুগের কবি, সাহিত্যিক, পণ্ডিত, ঐতিহাসিক, হাকিম ও নিম্নপদস্থ সরকারি কর্মচারীরা (আমিন, মুহরার প্রভৃতি) সকলেই একই সামাজিক শ্রেণীভুক্ত ছিলেন। দেশের শিক্ষিত শ্রেণী হিসেবে তাঁরা সামাজিক সম্মান পেতেন, উলেমারা ধর্মের ব্যাখ্যা করতেন। তবে উলেমাদের তখন সকলে পছন্দ করতেন না। বাংলার সুলতান বুঘরা খান তাঁর পুত্র কায়কোবাদকে অর্থলোভী উলেমা সম্প্রদায় সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছিলেন। আমীর খসরু তাঁর সময়ের কাজীদের অজ্ঞ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মনে করতেন। এমনকি তাঁদের কোনো সরকারি কাজ পাওয়া উচিত নয় বলেও তিনি অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে, সুলতানি যুগের কাজীরা উদ্ধত ও দাম্ভিক ছিলেন; এবং তাঁরা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করবার জন্য নিজেদের ন্যায়নীতি ও বিশ্বাসকে বিসর্জন করতেও দ্বিধা করতেন না। তবে সুলতানরা তাঁদের কোন ধরণের রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে দিতেন না; সুলতানি যুগের ভারতে ধর্ম, বিচার ও শিক্ষার ক্ষেত্রে তাঁদের নির্দিষ্ট ভূমিকা ছিল। একথা অস্বীকার করবার কোন উপায় নেই যে, সুলতানি যুগের উলেমারা সাধারণ মুসলমান ও শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে একটা যোগসূত্র হিসেবে কাজ করেছিলেন, এবং তাঁরা মুসলমান সমাজের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। সুলতানি যুগের উলেমাদের মধ্যে অনেকেই বিদেশী ছিলেন, হয় মধ্য-এশিয়ায় মোঙ্গল আক্রমণের জন্য তাঁরা ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন, আর নয়তো ভারতের আর্থিক সমৃদ্ধির কথা শুনে ভারতবর্ষে চলে এসেছিলেন। তাঁরা ভারতকে চিনতেন বা জানতেন না, তাঁরা ভারত ও ভারতের সামাজিক পরিকাঠামোকে কখনো চেনার বা জানবার প্রয়োজনবোধও করেন নি। তাঁদের একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সেকালের হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে বিভাজনের ওপরে জোর দিয়ে সময়ে সময়ে ধর্মীয় দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছিলেন। তখন ধর্মীয় পার্থক্য সত্ত্বেও সুলতানি প্রশাসনের মধ্যে যে সামাজিক সংহতি ছিল, সেটাকে তাঁরা অস্বীকার করেছিলেন।
সুলতান আলাউদ্দিন খলজী কেন্দ্রে শাসনের জন্য বড় মাপের একটা প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর আমলে রাষ্ট্রে রাজস্বব্যবস্থার সংস্কার হওয়ার পরে প্রদেশ ও জেলাগুলিতে বহু সরকারি কর্মচারীর প্রয়োজন হয়েছিল। বারানি তাঁর লেখায় সেসব কর্মচারীদের ক্ষমতা, দুর্নীতি ও অত্যাচারের নিখুঁত বর্ণনা রেখে গিয়েছেন। তাঁরা তখনকার কোন সামাজিক গোষ্ঠী থেকে এসেছিলেন, সেকথা বলা যায় সম্ভব নয়। তবে সিংহভাগ ঐতিহাসিকদের মতে সেযুগের উলেমা ও ধর্মান্তরিত মুসলমানদের একাংশই ওই সব কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সুলতানি যুগের মুকাদ্দম ও পাটোয়ারিরা হিন্দু ছিলেন, তাঁরা গ্রামে বাস করতেন, আর অন্যরা সকলে মুসলমান ছিলেন। সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক মুসলমানদের সঙ্গে হিন্দুদেরও সুলতানি প্রশাসনে সমভাবে জায়গা করে দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অল্প কয়েকজন হিন্দু উচ্চপদও পেয়েছিলেন। সেকালের হিন্দুরা ফার্সি ভাষা শিক্ষা করে সুলতানি প্রশাসনের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করেছিলেন।
©️রানা©️
(তথ্যসহায়ক গ্রন্থাবলী:
১- দিল্লি সুলতানি, রমেশচন্দ্র মজুমদার।