সরস্বতী দেবী সাধারণভাবে ইনি বাণী, বীণাপানি, বাক্দেবী, শুভ্রা, হংসবাহনা প্রভৃতি নামে পরিচিত।
এছাড়াও দেবী কখনও দ্বিভূজা, কখনো চতুর্ভুজা আবার প্রয়োজনবোধে কখনো বা ষোড়শভূজা। প্রত্যেক রূপেই মন্ত্র যন্ত্র পৃথক পৃথক। ষোড়শী বিদ্যাদেবীর ষোলটি নাম, ষোল রকমের রূপ। সকলেরই মাথার উপর মন্দিরের মত উঁচু মুকুট। সকলেই ললিত মুদ্রাসনে আসীনা, একটি পা নীচু করে রেখেছেন, একটি পা আসনের দিকে গুটানো। সকলেরই দক্ষিণ হস্ত বক্ষোপরি বরমুদ্রায় স্থাপিত, বামহস্ত মোড়া এবং উঁচুতে তোলা। প্রত্যেকটি অঙ্গভঙ্গীই গভীর ভাবের দ্যোতক, বিভিন্ন যোগরহস্যের সঙ্কেত-সূচক।
ষোড়শ নামের:—
1. রোহিনী — দেবীর বাহন জলচৌকি। দেবী চতুর্ভুজা। দক্ষিণ ও বাম উভয় হস্তেই চক্র। দেবীর অপর নাম —“অজিতবালা”।
2. প্রঞ্জপ্তী — দেবীর বাহন হংস। দেবী ষষ্ঠভুজা। তাঁর হাতে অসি, কুঠার, চন্দ্রহাস ও দর্পণ। দেবীর অপর নাম — “দুরিতারী”।
3. বজ্রশৃঙ্খলা — দেবীর বাহন হংস। দেবী চতুর্ভুজা। হাতে পারিখ ও বৈষ্ণবাস্ত্র।
4. কুলিশাঙ্কুশা — দেবীর বাহন অশ্ব। দেবী চতুর্ভুজা। তাঁর ডান হাতে অসি এবং বাম হাতে ভূষণ্ডী। দেবীর অন্যান্য নাম যথাক্রমে “মনোবেগা”, “মনোগুপ্তি”, “শ্যামা”।
5. চক্রেশ্বরী — দেবীর বাহন গরুড়। দেবী ষোড়শভূজা। উপরের দক্ষিণ ও বাম হস্তে শতঘ্নী এবং ১০ হাত মুষ্টিবদ্ধ। দুই হাত কোলে স্থিরভাবে পতিত এবং বাকী দুই হাতে বরদানের মুদ্রা।
6. পুরুষদত্তা ভারতী — দেবীর বাহন হস্তী। দেবীর দক্ষিণ হস্তে চক্র এবং বাম হস্তে শতঘ্নী। এঁর মুখমণ্ডল চতুস্কোণ বিশিষ্ট, পুরুষাকৃতি। দেহের গঠন সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ, কোমর সিংহের মত সরু।
7. কালী — এই কালী দশমহাবিদ্যার কালী নন। বাহন বৃষ। দেবী চতুর্ভূজা। দক্ষিণ হস্তে ত্রিশূল ও বাম হস্তে শতঘ্নী। দেবীর অপর নাম “শান্তি”।
8. মহাকালী — ইনিও তন্ত্রোক্ত দশমহাবিদ্যার মহাকালী নন। দেবীর কোন বাহন নেই। দেবী চতুর্ভুজা। ডান হাতে ষষ্ঠি এবং বাম হাতে শতঘ্নী। দেবীর অপর নাম “অজিতা” এবং “সুরতারকা”।
9. গৌরী — দেবীর বাহন বৃষ। দেবী চতুর্ভূজা। এঁর দক্ষিণ হস্তে মঙ্গলঘট এবং বাম হস্তে ষষ্ঠি। দেবীর মস্তকের মন্দিরাকৃতি মুকুটের বাম পার্শ্বে “চন্দ্র”। দেবীর অপর নাম “মানসী”ও “অশোকা”।
10. গান্ধারী — দেবী চতুর্ভূজা, কোন বাহন নেই। এঁর ডান হাতে পরিখ অর্থাৎ লৌহকণ্টকযুক্ত মুদগর আর বাম হাতে সীর(লাঙ্গলাস্ত্র); এর দুই স্থান বাঁকা। মুখ ও মূলাংশ লৌহবদ্ধ, সাধ্য ত্রিহস্ত পরিমিত দীর্ঘ। এই মন্ত্রের কাজ আকর্ষণ ও নিপাতন। এই দেবীর অপর নাম “চণ্ডা”।
11. সর্বাস্ত্রমহাজ্বালা — দেবী অষ্টভূজা। এঁর বাহন বৃষ। দক্ষিণহস্তে অসি, ত্রিশূল, ভল্ল (বর্শা বিশেষ)। কার্য— নিক্ষেপে ছেদন, নিপাতন ও শায়িত করণ। বৈষ্ণবাস্ত্র এবং বাম হস্তে ব্রহ্মশির অস্ত্র, তীর ও পাশ। মস্তকে মন্দিরাকৃতি বিরাট মুকুট। মুকুটের চতুর্দিকে অরণ্য। দেবীর অপর নাম “জ্বালামালিনী”,”ভৃকুটি”।
12. মানবী — দেবী চতুর্ভূজা।এঁর বাহন সাপ। দেবীর দু’হস্তে দর্পণ, এক হাতে ষষ্ঠি, অপর হাত বরমুদ্রায় স্থাপিত। দেবীর অপর নাম “অশোকা”।
13. বৈরাট্যা — দেবী চতুর্ভূজা।এঁর বাহন সাপ।এঁর দু’হস্তে বৈষ্ণবাস্ত্র ও ভল্ল। দেবীর অপর নাম “বৈরোটি”।
14. অচ্ছুপ্তা — দেবী চতুর্ভূজা। এঁর বাহন হংস। দক্ষিণ হস্তে ভল্ল এবং বাম হস্তে বিজয়ধনু। দেবীর অপর নাম “অনন্তবতী”,”অঙ্কশা”।
15. মানসী — দেবী চতুর্ভূজা। এঁর বাহন সিংহ। দক্ষিণ হস্তে ভল্ল ও কুঠার এবং বাম হস্তে দর্পণ ও বিজয়ধনু। দেবীর অপর নাম “কন্দর্পা”।
16. মহামানবী — দেবী চতুর্ভূজা। এঁর বাহন ময়ূর। দক্ষিণ হস্তে ভল্ল ও বাম হস্তে চক্র। দেবীর অপর নাম “নির্বাসী”।
ছবি ও তথ্য : সংগৃহীত