সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে বিএমজেপি’র অবস্থান :
জনাব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি অংশ হিসাবে হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং সংসদে ‘হিন্দুত্ববাদী প্রতিনিধিত্ব’ পাঠানোর যে আহ্বান জানিয়েছেন, আমরা সেই উদ্বেগ ও অনুভূতির প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় পার্লামেন্টে কার্যকর কণ্ঠস্বর থাকা আবশ্যক—এই মূল বক্তব্যে আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন আছে।
তবে, একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসাবে আমরা মনে করি, এই লক্ষ্য অর্জনের পথ ও কৌশল নিয়ে একটি বৃহত্তর এবং সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
১. ঐকমত্যের ক্ষেত্র: প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের প্রয়োজনীয়তা
আমরা স্বীকার করি যে, দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব বর্তমানে অত্যন্ত দুর্বল। বিগত সংসদগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মনোনয়ন পেয়ে যেসব প্রতিনিধিরা সংসদে গিয়েছেন, তারা দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা বা সম্পত্তি রক্ষার জন্য কার্যকর আইন প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছেন।
তাই, সংখ্যালঘুদের পক্ষ থেকে সংসদে এমন প্রতিনিধি প্রয়োজন, যিনি ব্যক্তিগতভাবে নয়, বরং একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক শক্তির অংশ হিসাবে এই বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিতে সক্ষম হবেন।
২. কৌশলগত ও আদর্শিক ভিন্নতা: ‘হিন্দুত্ববাদী’ বনাম ‘সংখ্যালঘু স্বার্থবাদী’
বিএমজেপি গোবিন্দ প্রামাণিক এর বক্তব্যের দুটি মূল অংশে নীতিগত ভিন্নতা পোষণ করে:
ক. ‘হিন্দুত্ববাদী’ শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে:
বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করে। বিএমজেপি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সকল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর পক্ষে কাজ করে।
• বিএমজেপি’র দর্শন: আমরা ‘হিন্দুত্ববাদী’ পরিচয়ের চেয়ে ‘সংখ্যালঘু স্বার্থবাদী’ পরিচয়ে বিশ্বাসী। ‘হিন্দুত্ববাদী’ শব্দটির ব্যবহার আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করতে পারে এবং সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু ঐক্যের মূল ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে।
• আমাদের লক্ষ্য: আমাদের মূল লক্ষ্য হলো মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়ে ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্রের সকল বৈষম্যের অবসান ঘটানো। এই বৃহত্তর আদর্শের ভিত্তিতেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
খ. ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর’ পক্ষে অবস্থান প্রসঙ্গে:
জনাব প্রামাণিক কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি না হয়ে স্বতন্ত্র বা স্বাধীন প্রার্থীর ওপর জোর দিয়েছেন। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএমজেপি এই কৌশলকে পর্যাপ্ত বলে মনে করে না।
• স্বতন্ত্র প্রার্থীর সীমাবদ্ধতা: একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়তো ভোটে জিতে সংসদে যেতে পারেন, কিন্তু জাতীয় নীতি নির্ধারণ, আইন প্রণয়ন ও দীর্ঘমেয়াদী প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনার জন্য সংসদে একক কণ্ঠস্বর যথেষ্ট নয়। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ও শক্তিশালী লবিং-এর জন্য সংগঠিত দলীয় শক্তি অপরিহার্য।
• দলীয় কাঠামোর গুরুত্ব: বিএমজেপি (বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি) একটি নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত দল (প্রতীক: রকেট)। আমাদের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং দেশজুড়ে একটি সাংগঠনিক কাঠামো আছে। এই কাঠামোই পারে বিচ্ছিন্ন সংগ্রামের পরিবর্তে ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি সৃষ্টি করতে, যা সকল সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা আইন, সম্পত্তি সুরক্ষা আইন ও বৈষম্য বিরোধী আইন প্রণয়ন করতে বাধ্য করবে।
৩. বিএমজেপি’র দৃঢ় আহ্বান
গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক যে লক্ষ্য নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন, সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আবেগপ্রবণ, বিচ্ছিন্ন ও কেবল ধর্মকেন্দ্রিক আহ্বানের পরিবর্তে সুসংগঠিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পথ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
• যারা নিজেদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় পার্লামেন্টে শক্তিশালী প্রতিনিধিত্ব চান, তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান: বিচ্ছিন্নভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য নয়, বরং সংখ্যালঘুদের একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম—বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি)-এর পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোন।
• বিএমজেপি কেবল হিন্দুদের নয়, বরং সকল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য সমান অধিকারের কথা বলে। আমাদের রাজনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পেলে সংসদে একটি ‘সংখ্যালঘু ব্লক’ তৈরি হবে, যা দেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘুদের ‘ভোট ব্যাংক’ হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা দূর করে তাদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের সংগ্রাম কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়, বরং রাষ্ট্রীয় বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং অকার্যকর প্রতিনিধিত্বের বিরুদ্ধে। এই সংগ্রামে একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএমজেপি-ই প্রকৃত সমাধান দিতে পারে। রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ না হলে শুধু আবেগময় আহ্বানে এই সংকট থেকে মুক্তি মিলবে না।
দলের পক্ষে
Dilip Kumar Das
মহাসচিব
Bangladesh Minority Janata Party – BMJP
#সংখ্যালঘু_অধিকার_চাই
#BMJP
#সংখ্যালঘুর_স্বার্থে
#ঐক্যই_শক্তি
#highlightseveryonefollowers
#following
#Bangladesh
#PoliticalNews
#bangladeshi
#sanatandharma
#hindubuddhistchristianunitycouncil
https://slotbet.online/