রাবণ যখন শ্রীরামচন্দ্রের হাতে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মৃত্যুশয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন তিনি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ কিছু কথা বলে গিয়েছিলেন। এই উক্তিগুলি প্রধানত লক্ষ্মণকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছিল, যখন শ্রীরামচন্দ্র লক্ষ্মণকে রাবণের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠিয়েছিলেন। রাবণ একজন মহাজ্ঞানী, শিবভক্ত এবং বহু শাস্ত্রে পারদর্শী পন্ডিত ছিলেন, যদিও তাঁর অহংকার ও অধর্মের কারণে তাঁর পতন হয়েছিল।
মৃত্যুর পূর্বে রাবণের বলা গুরুত্বপূর্ণ উক্তি ও উপদেশগুলি নিম্নরূপ:
১. শুভ কাজ দ্রুত করা এবং অশুভ কাজ বিলম্বিত করা: রাবণ বলেছিলেন, “শুভস্য শীঘ্রং।” অর্থাৎ, ভালো কাজ বা পুণ্য কাজ দ্রুত সেরে ফেলা উচিত, কারণ তা করার জন্য সময় নাও পাওয়া যেতে পারে। এর বিপরীতে, মন্দ বা অশুভ কাজ যত সম্ভব বিলম্বিত করা উচিত, কারণ সময়ের সাথে সাথে হয়তো সেই কাজ করার ইচ্ছা বা সুযোগ দুটোই চলে যেতে পারে। তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, তিনি শ্রীরামকে চিনতে ভুল করেছিলেন এবং সীতাকে ফিরিয়ে দেওয়ার শুভ কাজ দ্রুত করেননি, যার ফলস্বরূপ তাঁর বিনাশ হলো।
২. শত্রুকে কখনো ছোট না ভাবা: রাবণ স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি রামকে সামান্য মানব ভেবে ভুল করেছিলেন। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, শত্রুকে কখনো দুর্বল বা ছোট ভাবা উচিত নয়, কারণ একটি ছোট স্ফুলিঙ্গও বিশাল বন পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে। রামের মতো একজন সাধারণ মানুষ ভেবে তাঁকে অবজ্ঞা করা তাঁর সর্বনাশের কারণ হয়েছিল।
৩. নিজের ভেতরের শত্রু সম্পর্কে সচেতন থাকা: রাবণ বলেন যে, নিজের ঘরের ভেতরের বিভেদ বা বিশ্বাসঘাতকতা সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। বিভীষণ কর্তৃক তাঁর গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা তাঁর পতনের অন্যতম কারণ ছিল। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, শত্রুর চেয়েও ভয়ংকর হতে পারে নিজের কাছের মানুষের দ্বারা করা বিশ্বাসঘাতকতা।
৪. ক্ষমতা ও অহংকার পরিহার করা: রাবণ তাঁর জীবনে প্রচণ্ড ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, কিন্তু সেই ক্ষমতা ও তার থেকে উৎপন্ন অহংকারই তাঁকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। মৃত্যুর মুখে তিনি সম্ভবত এই অহংকারের ভয়াবহ পরিণতি উপলব্ধি করেছিলেন। যদিও তিনি সরাসরি এই বিষয়ে উপদেশ দেননি, তাঁর নিজের জীবনের ট্র্যাজেডিই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ ছিল।
৫. নারীকে সম্মান করা: রাবণের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সীতার হরণ এবং তাঁর প্রতি অসম্মান। যদিও তিনি সরাসরি এই বিষয়ে কোনো উপদেশ দেননি, তাঁর এই কর্মের ফলস্বরূপ তাঁর সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটেছিল। পরোক্ষভাবে এটি নারী জাতির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরে।
এই উপদেশগুলি রাবণের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার ফসল ছিল। একজন পরম বিদ্বান হওয়া সত্ত্বেও, তিনি যখন জ্ঞানকে অহংকার এবং অধর্মের পথে পরিচালিত করেছিলেন, তখন তাঁর বিনাশ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। মৃত্যুর পূর্বে তাঁর এই উক্তিগুলি মানুষের জন্য মূল্যবান শিক্ষাস্বরূপ।
https://slotbet.online/