ভারতে একটি লোহার কারখানা তৈরি করতে চাইলেন বিখ্যাত ব্যবসায়ী জামশেজী টাটা। আমেরিকা থেকে দুজন বিশেষজ্ঞ আনা হলেও তারা লোহার কারখানার যথাযথ স্থান নির্ধারণ করতে পারলেন না। অবশ্য টাটা শিল্প গোষ্ঠীর কারখানা তৈরি হল,আর তাদের সেই কাজে প্রত্যক্ষ পরামর্শ দিয়েছিলেন ভারতবিখ্যাত এক বঙ্গসন্তান, তিনি ভূতত্ত্ববিদ পি এন বসু আমরা তাঁকে চিনি প্রমথনাথ বসু নামে। বলা বাহুল্য প্রমথনাথ বসুর পরামর্শ ও দূরদৃষ্টি কে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নতুন কোম্পানিতে তাঁকে কিছু অংশ দিতে চেয়েছিল টাটারা, যদিও সেই প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখান করেছিলেন মেধাবী মানুষটা,কারণ ব্যক্তিগত ভাবে তিনি এক নির্লোভ মানুষ যার ছিল প্রবল আত্মসম্মানবোধ।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
প্রমথনাথ প্রথম ভূতত্ত্ববিদ যিনি বলেছিলেন আমাদের দেশে অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি পরিমাণে মূল্যবান খনিজ আছে।এই সব সম্পদের বেশিরভাগ তিনি আবিষ্কার করে গিয়েছেন।খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে বললে তিনি ভারতবর্ষের শিল্পের মানচিত্র আমুল বদলে দিয়েছেন। ভারতে শিল্পায়নের যুগপুরুষ বলা যায় প্রমথনাথকে। সারা দেশে আজ যত লোহার কারখানা, সে দিন প্রমথনাথ না থাকলে তা সম্ভবই ছিল না। দেশ জুড়ে তিনিই খুঁজে বার করেছিলেন লৌহ আকর ও চুনাপাথর। সাকচী গ্ৰামে গড়ে উঠেছিল টাটাদের লৌহ কারখানা। সেটাই ভারতের প্রথম লৌহ কারখানা। আমাদের দেশে লৌহ শিল্প গড়ার প্রথম স্থপতি প্রমথনাথ।সাকচীর বর্তমান নাম জামশেদপুর।ভারতে শিল্পায়নের যুগপুরুষ বলা যায় প্রমথনাথকে। সারা দেশে আজ যত লোহার কারখানা, সে দিন প্রমথনাথ না থাকলে তা সম্ভবই ছিল না। দেশ জুড়ে তিনিই খুঁজে বার করেছিলেন লৌহ আকর ও চুনাপাথর।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
বরাবর মেধাবী ছাত্রটি জন্মগ্ৰহন করেছিলেন উত্তর ২৪পরগনা জেলার গোবরডাঙায়।খাঁটুরার মডেল স্কুল, কৃষ্ণনগর কলেজে পড়েছেন এরপর মেধার জোরে পেলেন গিলক্রাইস্ট বৃত্তি। বিলেতে বিজ্ঞানের নানা শাখায় প্রজ্ঞা লাভ করে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। বিলেতে কোনও সরকারি চাকরি পাওয়া তাঁর পক্ষে একপ্রকার অসম্ভব কারণ ভারতের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের ঔদাসীন্য ও কুশাসন নিয়ে ওদেশেই বক্তৃতা আর লেখালেখি করে ঝড় তুলেছেন। কিছু দিন অপেক্ষার পর তাঁর জীবনের প্রথম চাকরি ভূতত্ত্ব বিভাগে এবং বিলেতে, তবে সরকার চাইছিল না ভারতপ্রেমী এই যুবক সেদেশে চাকরি করুক। অগত্যা চাকরি নিয়ে তিনি দেশে ফিরলেন।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায় প্রমথনাথ প্রথম ভারতীয় উচ্চপদস্থ কর্মচারী।মাত্র সাত বছরে নিজের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করে আরও উঁচুতে উঠেছিলেন।খনিজ সন্ধানী এই বিজ্ঞানী অক্টোবর মাসে সদলবলে বেরিয়ে পড়তেন, ফিরতেন এপ্রিলে।সেই সময় বেশিরভাগ ভূতাত্ত্বিক অভিযানের লক্ষস্থল ছিল মধ্যপ্রদেশ। নয় বছরের বিপুল পরিশ্রম আর মেধার সংমিশ্রণে জানা গেল নর্মদা নদীর নিচের অংশের খনিজসম্পদ, রায়পুরের লিগনাইট কয়লা,জব্বলপুরের লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ ঘটিত খনিজের কথা।সরকারি চাকরি ছেড়ে দিলেন ময়ুরভঞ্জ রাজ্যের খনিজের অধিকর্তা হয়ে নতুন কাজ কে আরও প্রসারিত করলেন।
প্রমথনাথ বসুর পরিচয় কী? কেন তিনি গুরুত্বপূর্ণ? এক কথায় বললে, পরাধীন ভারতের বিস্তৃত ভূখণ্ডে— ব্রহ্মদেশ থেকে রাজস্থান এবং কাশ্মীর থেকে গোদাবরী— প্রথম খনিজ আকরিকের সন্ধান করেছিলেন এই ভূতত্ত্ববিদ। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, “জগদীশচন্দ্র ও প্রফুল্লচন্দ্র উভয়েই দেশখ্যাত বিজ্ঞানী। এঁদেরও আগে আর একজন বাঙ্গালী বিলাত থেকে বিজ্ঞানে কৃতবিদ্য হয়ে দেশে ফিরে আসেন, তিনি ভূতত্ত্ববিদ্ প্রমথনাথ বসু। প্রমথনাথের জীবনধারা কালে কালে তাঁকে বাঙ্গালা দেশের পূর্বাচার্যদের সমআসনে উঠিয়েছিল।”
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের আচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন, পরে এর নতুন নাম হয় কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি। প্রমথনাথ সহ বহু শিক্ষক ও দাতা ছিলেন এর প্রাণপুরুষ।১৯৫৫সালে এই প্রতিষ্ঠানের নাম হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রমথনাথ বসুর একটি আবক্ষমূর্তি স্থাপিত হয়েছে এখানে।
জগদীশচন্দ্র ও প্রফুল্লচন্দ্র উভয়েই দেশখ্যাত বিজ্ঞানী। এঁদেরও আগে আর একজন বাঙ্গালী বিলাত থেকে বিজ্ঞানে কৃতবিদ্য হয়ে দেশে ফিরে আসেন, এই বক্তব্য কিংবদন্তি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর, কিন্তু কে সেই বাঙালি মনীষা! আমরা নিশ্চয়ই তাঁর সম্বন্ধে আমরা অবগত কিন্তু আমরা কি তাঁর প্রকৃত মর্যাদা দিতে পেরেছি! উত্তর হবে সম্ভবত না!
আমাদের আত্মবিস্মৃত হওয়ার একটা উদাহরণ মাত্র!
সংকলনে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে
পুস্তক ঋণ কৃতজ্ঞতা স্বীকার, বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা,প্রাক-স্বাধীনতা পর্ব, সম্পাদনা ধনঞ্জয় ঘোষাল, নিবন্ধ খনিজ সন্ধানী বিজ্ঞানী প্রমথনাথ বসু,নিবন্ধ আবাহান দত্ত, আনন্দবাজার পত্রিকা