🌅 পর্ব — 4 🌅
🏵 #ভগবানের_দিব্য_আবির্ভাব_লীলা 🏵
🌷 শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আবির্ভাবের পূর্বে
অদ্বৈত গোসাই আবির্ভূত হয়েছিলেন।
তিনি ছিলেন মহাবিষ্ণু ও সদাশিবের যুগ্ম অবতার।
তিনি ভাবছিলেন যে, এই কলিযুগে মানুষকে ভগবৎ প্রেম দান করা খুবই কঠিন হবে। বিষ্ণু হিসেবে তিনি দৈত্যদের সংহার করতে এবং মোক্ষ দান করতে সক্ষম ছিলেন। কিন্তু প্রেম দান করে মানুষকে পুরোপুরি পরিবর্তন করা সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, স্বয়ং কৃষ্ণকেই আসতে বলবেন, কারণ একমাত্র তিনিই প্রেম দান করতে পারেন।
🌷 তাই অদ্বৈত হুঙ্কার করে বলতে লাগলেন,
” হে কষ্ণ!হে কৃষ্ণ!” এবং গঙ্গাজল ও তুলসী দিয়ে শালগ্রাম শিলার পূজা করতে লাগলেন। তিনি উপবাস করে জোরে জোরে চিৎকার করলেন,
” হে প্রভু দয়া করে নেমে আসুন। যদি আমার নাম অদ্বৈত হয় (যার মানে হচ্ছে অভিন্ন)। তাহলে আমার নামকে সত্যে পরিণত করুন। আপনি নেমে আসুন। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি দয়া করে আসুন। গৌরাঙ্গ!গৌরাঙ্গ!গৌরাঙ্গ!” শ্রীবাস ঠাকুরও প্রকৃত ভাগবত ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে নেমে আসার জন্য কষ্ণের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। তাই ভগবান, জগন্নাথ মিশ্র ও শচীমাতার পরিবারে আবির্ভূত হলেন।
🌷 একদিন জগন্নাথ মিশ্র স্বপ্ন দেখলেন, হঠাৎ একটি উজ্জ্বল আলো তার হৃদয়ে প্রবেশ করল। তিনি দেখতে পেলেন, কৃষ্ণ তার হৃদয়ে অবস্থান করছেন এবং তার হৃদয় থেকে শচীমাতার হৃদয়ে প্রবেশ করছেন। তারপর শচীমাতার গর্ভে প্রবেশ করছেন। এটি ছিল একটি পবিত্র গর্ভধারণ, একটি অপ্রাকৃত স্থানান্তর। এভাবে ভগবান জগন্নাথ মিশ্রের হৃদয় থেকে শচীমাতার মধ্যে প্রবেশ করলেন।
🌷 জগন্নাথ মিশ্র লক্ষ করছিলেন, শচীদেবী আরো সুন্দর হয়ে উঠেছেন- তাকে দেখতে লক্ষীদেবীর মতো লাগছে। লোকজন স্বেচ্ছায় দ্বারে এসে বলত,” হে ব্রাক্ষণ, কিছু অর্থ গ্রহণ করুণ। ” তাকে ভিক্ষা করতে হতো না। বিভিন্ন লোকজন এসে ভিক্ষা দিয়ে যেত। তিনি পূর্বে কখনো ধনী ছিলেন না। ভাগ্যদেবী যেন তার গৃহে পদার্পণ করেছেন, তাই সবকিছুই শুভলক্ষণযুক্ত হয়ে উঠেছিল।
জগন্নাথ মিশ্র শচীদেবীকে বললেন, ” হে প্রিয় পত্নী, লোকজন এসে আমাকে অর্থ প্রদান করছে। এর মানে কী?” শচীদেবী বললেন, হয়ত কোনো মহাত্মা আমার গর্ভে অবস্থান করে সবকিছুকে মঙ্গলময় করে তুলেছেন। আমি প্রায়ই স্বর্গের দেবতারাদের এসে প্রার্থনা করতে দেখেছি।”
🌷 অনেক দেবতা এসে শ্রীচৈতন্যদেবের কাছে প্রার্থনা করছিলেন, “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়, জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ, জয় অদ্বৈতচন্দ্র, জয় গৌরভক্তবৃন্দ!হে গৌরাঙ্গ!হে প্রিয় কৃষ্ণ আমরা বুঝতে পারছি যে আপনি এই কলিযুগে গৌরাঙ্গরূপে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন। প্রতি যুগেই আপনি অবতার রূপে আসেন। এসে মুক্তি প্রদান করেন, কিন্তু কৃষ্ণপ্রেম দান করাটা আপনার জন্য বিরল। কিন্তু এই অবতারে আপনি ভগবৎ প্রেম অকাতরে দান করতে যাচ্ছেন।”
“আমরা স্বর্গলোক থেকে আপনার আশীর্বাদ লাভের জন্য এসেছি। আমরা জড়জাগতিক আশীর্বাদ চাই না। আমাদের তা যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। স্বর্গে ইন্দ্রিয়তৃপ্তির অনেক ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের শুধু দুটো সমস্যা ; একটি হচ্ছে দৈত্যরা মাঝে মাঝে স্বর্গ জয় করে উপভোগ করার জন্য আমাদের আক্রমণ করে। হিরণ্যকশিপু, রাবণ, বলিমহারাজ অনেকেই আক্রমণ করেছে। কখনো আমরা জয়ী হই, কখনো তারা আমাদের পরাজিত করে- এটি খুব বড় সমস্যা নয়। অপর সমস্যাটি হচ্ছে অত্যধিক ইন্দ্রিয় তর্পণ। অপ্সরা, গন্ধর্ব, সুন্দর নদনদী, বাগান, অসীম ক্ষমতা, ইন্দ্রিয় তর্পণের এতবেশি সুযোগ সুবিধা এখানে রয়েছে যে, আমরা আপনার প্রেমময়ী সেবা বিস্মৃত হই। অত্যধিক ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্যই আমরা আপনার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।”
🌹 প্রভুপাদ বলেছিলেন যে, তাঁর অনেক অনুসারী স্বর্গে যাবেন। যদি আমরা কৃষ্ণ সেবাকে গুরুত্ব না দিই, তবে আমাদেরি বিপদে পড়তে হবে। কিন্তু এই দেবগণ, যারা ভগবানের কাছে এসেছেন, তারা কৃষ্ণ সেবাকেই আলোকপাত করেছেন, তারা বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তাই তাদের খেদ,” আমরা প্রকৃত ভগবৎ প্রেম চাই। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুণ। আপনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন। মানুষেরা আপনার কৃপা লাভ করবে। আপনার কৃপা থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না, আমরাও কৃষ্ণপ্রেম লাভ করতে চাই।”
শ্রীচৈতন্যদেবের ইচ্ছায় দেবতারদের ছায়া দেখা যাচ্ছিল। শচীমাতা বললেন,”এ কি? আমার ঘরে কে? হে নৃসিংহদেব! আমাদের রক্ষা করুণ। ভূত প্রেত আসছে।”
🌷 জগন্নাথ মিশ্র ও শচীমাতা তাদের অনুভূতি গুলো মিলিয়ে দেখলেন। তারা বুঝতে পারছিলেন যে, বিশেষ কিছু ঘটতে চলেছে। শচীমাতার গর্ভকাল নয় মাস অতিক্রান্ত হচ্ছিল। আজকাল নয় মাস হবার পর প্রসব না হলে লোকজন দ্রুত সিজারের ব্যবস্থা করে। কিন্তু ভগবান তেরো মাস মাতৃগর্ভে ছিলেন। শচীমাতা তার পিতা জ্যোতিষশাস্ত্রে পারঙ্গত নীলাম্বর চক্রবর্তী বললেন, ” সবকিছু ঠিক আছে। তোমার ছেলে বিশেষ এক পৃর্ণিমাতে আবির্ভূত হবে।”
🌷 শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাবের শুভ দিনটি ছিল ফাল্গুনী পূর্ণিমার দিন এবং একই সাথে চন্দ্রগ্রহণের দিন। বৈদিক বিধান হচ্ছে, গ্রহণকালে সবকিছু কুলষিত হয়ে যায়, তাই কুলষমুক্ত হওয়ার জন্য এদিন পবিত্র নদীতে গিয়ে দিব্যনাম কীর্তনযোগে স্নান করতে হয়। তাই প্রায় সমস্ত নবদ্বীপের হাজার হাজার মানুষ গঙ্গায় গিয়ে কীর্তন করতে থাকে, “গোবিন্দ! গোবিন্দ! হরে কৃষ্ণ! হরিবোল!”
মুসলিমরা এসব দেখে বলতে থাকে,” এই হিন্দুরা এসব কি করছে? তারা বলছে হরিবোল! হরিবোল! হরেকৃষ্ণ!” তাই যদিও মুসলিমদের বিশ্বাস ছিল না,তারাও ভগবানের দিব্যনাম কীর্তন করতে লাগল। তারা হিন্দুদের ব্যঙ্গ বিদ্রূপ বা ঠাট্টা করছিল, কিন্তু যেভাবেই হোক তারাও কীর্তন করছিল। সেই শব্দতরঙ্গে বাতাস মুখরিত হলো।
🌻 শ্রীবাস ঠাকুর ভাবতে লাগলেন,” অনেকেই বলে এই গ্রহণ অশুভ,কিন্তু দেখ প্রতে্যকেই কীভাবে দিব্যনাম কীর্তন করছে। এতো খুবই শুভ সময়। প্রত্যেকেই কীর্তন করছে হরিবোল! হরিবোল!”
এভাবে গঙ্গা থেকে আসা শ্রীকৃষ্ণের দিব্য নামোচ্চারণে মুখরিত হয়ে উঠল, তাই শ্রীবাস ঠাকুরসহ অন্য ভক্তরা খুব আনন্দিত হলেন। সাধারণত লোকজন উচ্চৈঃস্বরে কৃষ্ণনাম করত না। স্মার্ত ব্রাক্ষণরা বলতেন যে, “উচ্চৈঃস্বরে হরিনাম করা অপরাধ-নাম তার শক্তি হারাবে। যেহেতু লোকজন অশুদ্ধ,তাই তাদের উচ্চৈঃস্বরে কীর্তন করা উচিত নয়। ” কিন্তু যখন তারা গঙ্গায় ছিল, তখন তা অনুমোদিত ছিল, কারণ গঙ্গা পবিত্র, তাই সবাই তখন কীর্তন করছিল।
বৈষ্ণবরা খুব খুশি হয়েছিলেন। তারা ভাবছিলেন,” এই দিনটিকে কেন অশুভ দিন বলা হচ্ছে, এই দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন – প্রত্যেকেই পবিত্র নদীতে স্নান করছে, নৃত্য করছে, ভগবানের নামকীর্তন করছে।” তারা সকলেই হরিনাম করতে দেখে উল্লসিত হয়ে নৃত্য করতে লাগলেন।
তাই, সে সময় শ্রীচৈতন্যদেব তার কৃপা বর্ষণ করার জন্য আবির্ভূত হলেন। যখন তিনি আবির্ভূত হলেন, তখন চন্দ্র উদিত হচ্ছিল এবং সমগ্র ভারত
#হরে_কষ্ণ_হরে_কৃষ্ণ_কৃষ্ণ_কৃষ্ণ_হরে_হরে
#হরে_রাম_হরে_রাম_রাম_রাম_হরে_হরে
এই অপ্রাকৃত শব্দতরঙ্গে মুখরিত ছিল।
🌺 সর্বত্রই এই সংবাদ প্রচারিত হলো যে, শচীমাতা একটি ফুটফুটে ছেলের জন্ম দিয়েছেন, যাঁর #গায়ের_বর্ণ ছিল #স্বর্ণের_মতো। তাই সকল প্রতিবেশী মহিলা সেই ছেলেকে দেখতে এলেন এবং ব্রাক্ষণ মহিলারা তাঁর কপালে দুর্বা ও হরিদ্রা মিশ্রিত চাল দিয়ে আশীর্বাদ করতে লাগলেন। এটি ছিল অত্যন্ত আনন্দঘন ও উৎসবমুখর মুহূর্ত।
🌷 এমনকি উচ্চতর গ্রহলোক থেকেও কেউ কেউ ভগবান কে দর্শন করার জন্য নেমে আসতে লাগলেন, দেবদেবীরা ব্রাক্ষণ ও ব্রাক্ষণীর বেশ ধারণ করেছিলেন। শচীমাতা অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন,” এত লোক কোথা থেকে আসছে?”
জগন্নাথ মিশ্র ছিলেন একজন দরিদ্র ব্রাক্ষণ। কিন্তু তিনি মনে মনে অনেক গাভী দান করলেন এবং ভোজন করালেন। এমন একটি সুন্দর পুত্র সন্তান লাভ করে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন।
🌷অদ্বৈত গোসাই অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে শান্তিপুরে নৃত্য করতে লাগলেন, ফুলিয়াতে হরিদাস ঠাকুর সমাধিস্থ হয়ে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করতে লাগলেন। এভাবে সকল বৈষ্ণব তাঁদের হৃদয়ে অপ্রাকৃত আনন্দ অনুভব করতে লাগলেন। কারণ, পরমেশ্বর ভগবান আবির্ভূত হয়েছেন।
🌷পরদিন অদ্বৈত আচার্যের স্ত্রী সীতা ঠাকুরাণী শ্রীচৈতন্যদেবকে দর্শন করতে এলেন। তিনি অত্যন্ত অভিজাত ছিলেন। যেহেতু অদ্বৈত ছিলেন সকল ব্রাক্ষণ বৈষ্ণবের মধ্যে অগ্রগণ্য তাই সীতা ঠাকুরাণী শ্রীচৈতন্যদেবের জন্য বিশেষ উপহার সামগী নিয়ে এলেন। সুগন্ধি তৈল, শস্যদানা এবং শিশুর নিরাপত্তার জন্য একটি বাঘের নখ দিলেন। শিশু রূপে ভগবানকে আবির্ভূত হতে দেখে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন।
💝🙏#হরে_কৃষ্ণ🙏💝
🌿🌾🌷🌿🌾🌷🌿🌾🌷🌿🌾🌷🌿🌾🌷🌿
https://slotbet.online/