বেদে অবতার
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রত্যেকটি বিষয়ই বেদ থেকে আগত। একথা অবিসংবাদিত সত্য যে, বৈদিক সুদৃঢ় ভিত্তির উপরেই রামায়ণ, মহাভারত, অষ্টাদশ পুরাণ এবং স্মৃতিশাস্ত্রসহ সকল সনাতন শাস্ত্র সংস্থাপিত। যদি কোনো শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তে সংশয় দেখা যায়, তবে বেদই তখন একমাত্র প্রমাণ বলে বিবেচ্য। যজ্ঞ, তপস্যা, প্রতিমা পূজা, ঈশ্বরের অবতারতত্ত্বসহ বর্তমানের ধর্ম বিশ্বাসের সকল বিষয়ই বেদে পাওয়া যায়। কখনো বৃহৎ আকারে, আবার কখনো সংক্ষিপ্ত পরিসরে। ঈশ্বরের অবতার প্রসঙ্গে ঋগ্বেদ সংহিতায় বলা হয়েছে যে, সমস্ত দেবগণের প্রতিনিধিভূত ইন্দ্র বিবিধ মূর্তি ধারণ করেন। পরমেশ্বরের দুষ্ট বিনাশকারী রূপের নাম ইন্দ্র। সেই পরমেশ্বর ইন্দ্র জীবের কল্যাণে অনন্ত রূপ পরিগ্রহ করে এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে অনন্তভাবে প্রকাশিত হন। সকল কর্মই তিনি করেন মায়াদ্বারা। তাঁর মায়ায় এ জগত বিমোহিত। তাঁর কোনো সুনির্দিষ্ট রূপ নেই। তিনি অনন্ত এবং চিন্তার অতীত। তবে তাঁর রূপ আছে ভক্তের মানসজগতে। ভক্তের বিপদে, ভক্তের ডাকে, ভক্তের কল্যাণে তিনি ভক্তের মনজগতের রূপকে অবলম্বন করে ভক্তকে রক্ষা করেন। অচিন্ত্য পরমেশ্বর দৃশ্যমান ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয়ে ধরা দেন, কারণ অনন্ত তাঁর শক্তি, অনন্ত তাঁর বৈভব। ঈশ্বরের ভাব, অসীমের মধ্যেও তিনি সসীম।
রূপং রূপং প্রতিরূপো বভূব তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায়।
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে যুক্তা হাস্য হরয়ঃ শতা দশ।
(ঋগ্বেদ সংহিতা: ০৬.৪৭.১৮)
“সমস্ত দেবগণের প্রতিনিধিভূত এ ইন্দ্র বিবিধ মূর্তি ধারণ করেন এবং সে রূপ পরিগ্রহ করে তিনি পৃথকভাবে প্রকাশিত হন। তিনি মায়াদ্বারা বিবিধ রূপ ধারণ করে যজমানগণের নিকট উপস্থিত হন; কারণ সহস্র অশ্ব সংযুক্ত বা অনন্ত গতিময় তাঁর দৈবরথ।”
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় সনাতন অবতার তত্ত্ব বৈদিক। বেদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে ভগবানের মৎস্য অবতার (শতপথ ব্রাহ্মণ: ০৮.০১.০১-০৬), কূর্ম অবতার (শতপথ ব্রাহ্মণ: ০৪.০৪.০১.১৫; শতপথ ব্রাহ্মণ: ০৭.০৪.০১.১৫: শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতা: ১৩.৩০), বরাহ অবতার (ঋগ্বেদ সংহিতা: ০১.১১৪.০৫: কৃষ্ণযজুর্বেদ সংহিতা: ০৭.০১.০৫: মহানারায়ণ উপনিষদ: ০৪.০৫; তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ, ০১.০১.০৩; শতপথ ব্রাহ্মণ: ১৪.০১.০২.১১), বামন অবতার (ঋগ্বেদ সংহিতা: ০১.২২.১৬-১৯; ঋগ্বেদ সংহিতা:০৮.২৯.০৭; ঋগ্বেদ সংহিতা: ০১.১৫৪.০১-০৪; ঋগ্বেদ সংহিতা: ০১.১৫৫.০৪-০৫: ঋগ্বেদ সংহিতা: ০৬.৪৯.১৩), নৃসিংহ অবতার (ঋগ্বেদ সংহিতা: ০১.১৫৪.০২-০৩: মহানারায়ণ উপনিষদ: ০৩.১৭) প্রভৃতি অবতারের কথা যেমন রয়েছে। তেমনি বেদের একাধিক স্থানে রয়েছে লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা।
https://slotbet.online/