নোয়াখালী বরিশাল খুলনা ও ঢাকার হিন্দু গনহত্যার কথা কাউকে জানতে দেয়নি পঃবঙ্গের শিল্পি সাহিত্যিক সাংবাদিক চিত্রকরেরা।রাতের অন্ধকারে তারাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছিল।
দেশভাগের পর নেহেরু-গান্ধী চায়নি পূর্ব-বঙ্গ থেকে কোন উদ্বাস্তু পঃবঙ্গে আসুক।কিন্তু পঃবঙ্গের শিল্পি সাহিত্যিক বাম রাজনৈতিক দলের বেশির ভাগ নেতারা সেদিন রাতের অন্ধকারে এক কাপড়ে নিজের পৈত্রিক ভিটেবাড়ি ছেড়ে পঃবঙ্গে এসে ঠাই নিয়েছিল।
দেশভাগ যে শুধু দুটি দেশকে দ্বিখণ্ডিত করেছিল এমন নয়।এই দেশভাগ মানুষের হৃদয়কে বহুখন্ডিত করেছিল।দেশভাগের এই অভিশাপ যে কত হৃদয় বিদারক তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ অনুধাবন করতে পারবেনা।
দেশ হারানোর এ এক দিগন্তব্যাপী হাহাকার।এই দেশভাগ যে কত মায়ের কোল খালি করেছে কত বোন বিধবা হয়েছেন কত অশ্রুপাত কত অব্যক্ত বেদনা তার কোন শেষ নেই।তার কোন স্বীকৃতি ইতিহাসেও নেই।কেবলই যারা ভুক্তভোগী তাদের মধ্যেই এই বেদনার অনুরনন।এ এক অকৃতজ্ঞ অমানবিক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।
শুধু বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য নয় মানবতার ইতিহাসে এই হিন্দু গনহত্যার ইতিহাস জানা এবং জানানো খুব প্রয়োজন।
দেশভাগের প্রাক্কালে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্টের ক্যালকাটা কিলিং নোয়াখালী দাঙ্গা বরিশাল,খুলনা,ঢাকার দাঙ্গার ফলে লাখ লাখ হিন্দুর উপর যে নেমে এসেছিল ইতিহাসের নিশংসতম গনহত্যা আমরা সে ইতিহাস মনে রাখিনি। দেশভাগের পর আজ পর্যন্ত কোন সরকার সেদিনের হিন্দু গনহত্যার ইতিহাস কোন পাঠ্য বইয়ে লিপিবদ্ধ করেনি।কারন এর পিছনে ছিল সুগভীর চক্রান্ত।অথচ ইসলামের ভারত বিজয়ের গৌরবগাঁথা ঠিক ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে।
এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অধিকার রয়েছে তাদের পূর্ব-পুরুষেরা কি পরিস্থিতিতে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল কিভাবে জোর করে ধর্মান্তরিত হতে হয়েছিল কিভাবে মেয়েরা ধর্ষিত হয়েছিল কিভাবে মিথ্যা গল্প ছড়িয়ে হিন্দুদের উপর নেমে এসেছিল হত্যালীলার এক অবর্ননীয় লোমহর্ষক ঘটনা।সে সব ইতিহাস এই প্রজন্মের জানা খুব প্রয়োজন।
হিন্দু গনহত্যার অনেক তথ্য সম্বলিত দলিল বিভিন্ন সংগ্রহসালায় রয়েছে যা হতে পারে ইতিহাসের অংশ।যেমন দেশভাগের পর ১৯৫০সনের ৬/৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান রেডিও থেকে প্রচারিত একটি ঘোষণা ঢাকার বুকে নেমে এসেছিল হিন্দু গনহত্যার এক লোমহর্ষক মহোৎসব।
ঘোষণায় বলা হয়েছিল,”ভাই সব আপনারা শুনেছেন পঃবঙ্গ ও ভারতে আমাদের মুসলমান ভাইদের উপর অমানবিক অত্যাচার করা হচ্ছে।আপনারা কি প্রস্তুত হবেন না,আপনারা কি শক্তি সঞ্চয় করবেন না?এরপর ১০ফেব্রুয়ারি সকালে ৪জন মুসলিম মহিলার হাতে শাখা-কপালে লাল রং লাগিয়ে ঢাকা সেক্রেটারিয়েটের চারিদিকে ঘোরানো হয়।বলা হয় কোলকাতায় এদের হিন্দু বানিয়ে এদের স্তন কেটে অত্যাচার করা হয়েছে।এরপর বেলা ১১টার সময় সেক্রেটারিয়েটের কর্মচারিবৃন্দ অফিস ত্যাগ করে ভিক্টোরিয়া পার্কে জমায়েত হয়ে সভা করে।
এই সভা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় হিন্দু হত্যা-হিন্দুদের দোকান-পাট লুট অগ্নিসংযোগ এবং সাথে নারী ধর্ষন।সেই সময় ট্রেন ও স্টিমার করে যে সব হিন্দুরা ঢাকায় আসছিল প্রানে বাচার জন্য কিন্তু স্টেশনেই তাদের হত্যা করা হয়েছিল।সেই সময় ভৈরব ব্রিজের উপর ট্রেন থামিয়ে হিন্দু নরনারীদের হত্যা করে লাশ মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল।রক্তে মেঘনা নদীর জল লালা হয়ে গিয়েছিল।সে ট্রেন যখন ঢাকা স্টেশনে পৌঁছে তখন ট্রেনের কামড়ায় মহিলাদের চুড়ি শাখার ভাঙা টুকরো যে কি বোবা কান্না আর আহাজারি সৃষ্টি করেছিল সে ইতিহাস এই প্রজন্মের জানার অধিকার রয়েছে।
ইতিহাস চেপে রাখা যায় না।
৪৭ এর দেশভাগের পর যাদের মনোজগত থেকে পূর্ব-বঙ্গের গনহত্যা নির্যাতন,ধর্মান্তর,বাড়িঘর লুটপাট, অগ্নিসংযোগ দেশ থেকে বিতারনের কথা ভুলে গিয়েছে,যারা নিজেদের রক্তের উত্তরসূরীদের ভুলে গিয়ে ভাবছেন ভাল আছেন আর নিজেদের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবর্তক ভেবে রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস করছেন তারা যে কত নির্মম আচরণ করছেন একমাত্র বিভীষিকার জলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিজের রক্তস্নাত সেই ধর্ষিতা মা-ই একমাত্র জানেন সেদিনের নির্মম যন্ত্রণার কথা।যে মা সেদিন ধর্ষিতা হয়ে প্রান বাচাতে পঃবঙ্গের কোন রেলস্টেশন বা ষ্টীমার ঘাটে অথবা কোন রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের কথা আজ আর কারো মনে নেই।
মহা-প্লাবনের প্রলংকরী প্রলয়ে সব হারিয়ে গিয়েছে। অগ্নিকুন্ডের পোড়া দেহ আজ দূসর হয়ে মিলিয়ে গিয়েছে অদূরে।দুর্ভিক্ষ,খরা-দাঙ্গা দেশভাগ সব কিছুই মিলিয়ে গিয়েছে কালক্রমে।কিন্ত সেই দাগ মুছে যায়নি।আজকে অনেক কবি সাহিত্যক চিত্রকর লেখক যাদের দেশভাগের সেই সব অব্যক্ত যন্ত্রনার কথা চিত্রপটের ক্যানভাসে ধরে রাখার কথা,সাহিত্যের করুন ব্যঞ্জনায় সেই মায়ের বুকফাটা আর্তনাদের কথা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ করার কথা তাদের দেখি উর্ধ বাহু হয়ে ধেই ধেই করে নাচতে।ভাবি এরাই কি সেই মায়ের অসূচি সন্তান?
যারা পূর্ব জন্মের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে?হবে হয়তো নইলে এমন তো হওয়ার কথা নয়।যাদের রক্তবীজে অঙ্কুরিত তাদের কথাইতো বলবে।এটাইতো স্বাভাবিক।তারা যে বেজন্মা ছিল তা আজ আর বুঝতে বাকি নেই।
আমরা সব ভুলতে বসেছি।যে নারীর গর্ভে তাদের জন্ম হয়েছে সেই মা কি তার ধর্ম ঠিক রেখে তাকে জন্ম দিয়েছিলেন? আজ পঃবঙ্গের কিছু হিন্দু নেতার অবিমৃষ্যকারীতায় সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়।সৃষ্টিতত্ত্বে মানুষে মানুষে কোন পার্থক্য নেই,আকৃতি-প্রকৃতি, সুখ-দুঃখ, ক্ষুধা-তৃষ্ণা,আহার-বিশ্রাম, অনুভূতি সব মানুষ অভিন্ন।
কিন্তু কেউ নিজেকে উজার করে দিয়েছেন নিরন্ন ভুখা-নাঙ্গা দেশহারা ভাসমান জনগোষ্ঠীকে একমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে।আবার কেউ সেই সব নিরন্ন মানুষের অতীত দুঃখ্য কষ্টকে পুঁজি করে পরিহাস করে ছিঃছিঃ ক্যাঃক্যা করে বলছেন নাগরিকত্ব মানিনা মানব না। যারা কলকাতার ডাইরেক্ট একশনের কথা ভুলে গিয়েছেন তাদের পক্ষেই এমন আচরণ সম্ভব।১৯৪৬ সালের ১০ই অক্টোবরে নোয়াখালীর গনহত্যা ৪সপ্তাহ চলেছিল।দাঙ্গার ৭২ঘন্টার মধ্যে প্রান হারিয়েছিলেন ৪হাজার নিরিহ হিন্দু জনগোষ্ঠী গৃহহীন হয়েছিলেন ১লাখের অধিক।
এটি ছিল কলকাতা কিলিংয়ের পরবর্তী হত্যাযজ্ঞ। ৫০০০ হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল।অনেক নারী ধর্ষনের শিকার হয়েছিলেন।বহু নারীকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল এবং তাদের কাছ থেকে জোর করে লিখিত রাখা হয়েছিল যে তারা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছেন।যারা বেচে ছিলেন তাদের ইসলামের বিধান মতো কোন ইসলামিক রাষ্ট্রে যেমন অমুসলিমদের জিজিয়া কর দিতে হয় তেমনি তাদের মুসলিম লীগকে চাঁদা দিতে হয়েছিল। দেশভাগ ছিল এক হাজার বছরের মুসলিম রাজত্ব পুনরুদ্দারের নীলনক্সা।
বেচে যাওয়া হিন্দুরা পালিয়ে এসেছিল কলকাতার শিয়ালদা বনগাঁ ত্রিপুরা সহ পার্শবর্তী এলাকায়। কি নির্মম ছিল দাঙ্গা পীড়িতদের জীবন। এক মুঠো ভাতের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়েছে বাবুদের দিকে।দেহ ব্যাবসা দিন মজুরি ভিক্ষা বৃত্তি কিনা করতে হয়েছে সেই সব নিরন্ন মানুষগুলোকে।সবই অতলান্তের গভীরে আজ নিমজ্জিত।১৯৫০ এর বরিশাল দাঙ্গা।১৯৪৯সালের ২০ডিসেম্বর খুলনা-বাগেরহাট কালশিরা হত্যাকাণ্ড সবই কি শুধু ইতিহাস? এর থেকে কি আমরা কিছুই শিখব না?
হত্যা জোর করে ধর্মান্তকরন ঐ গ্রামের ৩৫০টি বাড়ির সবগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।এক মাসের নৃশংস গনহত্যায় ৩০হাজার হিন্দু প্রান ভয়ে পঃবঙ্গে পালিয়ে এসেছিল।এদেরই কেউ আজকের উত্তরসূরি এখন রাস্তায় উল্লাস করে হেটে বলছে নাগরিকত্ব আইন মানিনা।কালশিরা গনহত্যার পরে পূর্ব-বাংলার অসংখ্য হিন্দু শরনার্থী পঃবঙ্গে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিল।হাজারে হাজারে শরনার্থী রেলওয়ে স্টেশন স্টিমার ঘাটে জড়ো হয়ে দিন গুনছিল কিভাবে প্রান বাচাবে।
সেই সময় পঃবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় বরিশাল ফরিদপুর থেকে শরনার্থীদের আনার জন্য ১৫টি স্টিমারের ব্যবস্থা করেছিলেন।আর আজকে আরেক মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় হেটে বলছেন নাগরিকত্ব আইন মানিনা।
১৯৬৪ সালে পূর্ব-পাকিস্তানের দাঙ্গা হিন্দুদের জাতিগত ভাবে নির্মূল করার জন্য চালানো হয়েছিল ঢাকা ও তার আসে পাশের এলাকায়।ঢাকার রাস্তায় কথিত এক নারীর স্তন কেটে নিয়েছে কলকাতার হিন্দুরা এই গুজব রটিয়ে ঢাকা ও তার আস পাশে যে নির্মম হত্যালীলা চালানো হয়েছিল তা ছিল বিরল।
যারা সেদিনের হত্যাকাণ্ডের উত্তরসূরি পঃবঙ্গের রাস্তায় হেটে বলা হচ্ছে তাদেরকে নাকি নাগরিকত্ব দিতে হবে।যারা ভারতকে দার-উল ইসলামে পরিনত করতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের নাকি নাগরিকত্ব দিতে হবে।ইসলামের বিধান অনুসারে কোন মুসলমান অমুসলমানের অধিনে থাকতে পারেনা।আমরা কি একবার ভেবে দেখেছি আমরা জ্ঞাতসারেই সে দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।এখনো যদি আমরা দেশভাগের বঞ্চিতদের নুনতম অধিকারটুকু ফিরিয়ে না দেই তাহলে যে নিজের রক্তের সাথে বেইমানি করা হবে।
এতটুকু নিমকহারামী প্রকৃতি মেনে নেবে না ইতিহাস তার প্রমান।বিদেশি মুসলমান আক্রমনকারীরা যখন ভারতে আসে তখন ভারতে হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৬০কোটি। এই ৬০কোটি হিন্দু কাফেরের সামনেও তখন দুটো রাস্তা ছিল হয় ইসলাম নয় মৃত্যু।কিন্তু মুশকিল হল এই যে,মুসলমানরা কোটি কোটি হিন্দুকে হত্যা করল বটে কিন্তু তাদের মুসলমান করতে পারেনি।তাই তারা ৭০০/৮০০ বছর রাজত্ব করে তারা মাত্র ১১%হিন্দুকে মুসলমান করতে সক্ষম হয়েছিল।
এই ব্যাপারে মন্তব্য করতে গিয়ে তৎকালীন মুসলমান পর্যটক আলবেরুনী লিখেছিলেন, “হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে,তাদের@ দেশের মতো দেশ নেই,তাদের ধর্মের মতো ধর্ম নেই,তাদের বিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞান নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।অথচ আজকে পঃবঙ্গের নেতা-নেত্রীরা বলেন যে গাই দুধ দেয় তার লাথি খাওয়াও নাকি ভাল।অথচ সেই সম্প্রদায়ের গ্রন্থে কোথাও উল্লেখ নেই যে, ওহে মুমিনরা তোমার লেখাপড়া শিখে মানুষ হও,সৎ সভ্য মানুষের মতো জীবন যাপন কর।
পক্ষান্তরে আল্লাহ বলেছেন, অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করো না।অমুসলিমরা বিশ্বাসীদের শত্রু। এই যাদের অন্তিম লক্ষ,সভ্যতার পথে তারা অগ্রসর হবে কেমন করে। কাজেই বুঝতে অসুবিধে হয় না যে,এই বিশ্বে মুসলমানরা কেন সব ব্যাপারে অনগ্রসর।কেন তাদের মধ্যে নিরক্ষরতা ও দারিদ্রতা।তারপরও সমন্বয় আমাদের ধর্ম।অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ যারা না করে তাদের মতো দুর্ভাগা এ জগতে আর নেই।
সুত্র : ফেসবুক থেকে কপি পেস্ট
https://slotbet.online/