• July 12, 2025, 10:42 pm
শিরোনাম
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের দিন মজুর সুকলাল দাস ও কণিকা দাসের কন্যা পুষ্পমালা দাস রাধা-কৃষ্ণের নিত্য পূজার জন্য কিছু সাধারণ নিয়মা বলী নিচে দেওয়া হলোঃ যারা কুমিল্লার মুরাদনগরের বোনটির চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ করছেন শিব লিঙ্গ পূজা হিন্দু ধর্মে, বিশেষ করে শৈব সম্প্রদায়ে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাসনা পদ্ধতি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের পাইলট নিহত, এফ-১৬ বিমান ভূপাতিত আজব দুনিয়া আজব নিয়ম এই সমাজে – কি করবেন এরা স্বামী-স্ত্রী কখনো দীর্ঘদিন দূরে থাকবেন না বেসরকারি চাকরিতে ভাইভা বোর্ডে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞেস করা হয় নিচের ৭৭ টি প্রশ্নঃ যারা আপনার সাফল্য বা সুখ সহ্য করতে পারে না, কে দিল এই নাম কোন সে পুরুষ? কার জন্য নারী হলো বে*শ্যা প্রশ্ন একটাই সফলতা পেতে হলে আগে নিজেকে ডেভলপ করতে হবে ফিনল্যান্ডের একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্য কলকাতার সোনাগাছিতে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা আমরা সবাই মানুষ ভারতে বাংলাদেশিদের কিডনি চুরির ঘটনায় ডাক্তার আটক ঐতিহ্য বহন করে চলেছে লালগোলার রথযাত্রা ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজের সামনে হঠাৎ এক বৃদ্ধ রিকসাওয়ালা আসলেন সরকারী দপ্তরের ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র শালিখা উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদৎ বার্ষিকী পালন। হিন্দু মহিলাকে পাকিস্তানে মাথা কেটে খুন মৃত্যুরহস্যের জট ছাড়াতে যাদবপুরের হস্টেলে নিয়ে যাওয়া হল ধৃত সপ্তককে, চলছে ঘটনার পুনর্নির্মাণ মাঝরাতে নেশায় চুর হয়ে এক মাতাল বাড়ি ফিরছে ফিরে দেখা ইতিহাস বাংলাদেশ ও ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র মা কখনো বাড়ির পুরুষদের সাথে খান নি গাথুনী এবং প্লাস্টারের হিসাব(টাইমলাইনে রেখে দিন) মাগুরার শ্রীপুরের জমিদার বাড়ি ইউরোপের একটি দেশ যেখানে এই দৃশ্য অহরহ দেখতে পাবেন দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ফের ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১০ জনের আমরা সবাই রাজা বাংলাদেশের প্রথম ধনী ও শিল্পপতি জহুরুল ইসলাম আপনার কি হাসি আসছে, হিরো আলম বই লিখেছে চলমান ও আসছে BDS বা বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে জরিপঃ বেদের মেয়ে জোসনা’র আয় মাত্র ৭ কোটি টাকা : দাবি আজিজের হারিয়ে যাওয়া এক বিখ্যাত পেশা-ভিস্তিওয়ালা। হিন্দি তো জাতীয় ভাষা! UP-র কোর্টে ওই ভাষায় সাক্ষী দিতে বাংলার কারুর অসুবিধা কোথায়?’ মাগুরা স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন আলেয়াকে বিয়ে করার ২৫ দিনের মাথায় বাহরাইন চলে যাই গতকাল নড়াইল জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ স্থানীয় জনগণের সঙ্গে এক উন্মুক্ত মতবিনিময় সভা শনি দেবের দুই স্ত্রীর নাম হলো নীলা এবং মান্দা বা ধামিনী। গো মাতা কেন সনাতন ধর্মে পূজনীয়? খুলনায় সাবেক যুবদলের নেতাকে গুলি করে হত্যা কৃষ্ণের_মুখে_ব্রহ্মাণ্ড দর্শনের এক গভীর ভক্তিময় অনুভূতি শ্রী_রাম_চালিসা মন্দির পরিক্রমা আজ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে BMJP পার্টির মিটিং

পুরনো কলকাতার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা’

Reporter Name 71 Time View
Update : শিরোনাম মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৪, ২০২৩

আমাদের স্কুল-কলেজের পাঠ্য ইতিহাসের পাতা ভর্তি হয়েছে রাজা-রাজড়াদের উত্থান-পতন আর যুদ্ধ, খুন ও ষড়যন্ত্রের কাহিনী দিয়ে। সেখানে সামাজিক ইতিহাসের উপাদান খুব একটা বেশি খুঁজে পাওয়া যায় না। বেশি দিন আগের কথা বলছি না। মাত্র তিনশো বছর আগেও মানুষ দূর পথে যাতায়াত করত কি ভাবে? জানতে কৌতূহল হয়। সর্বকালে, সর্বদেশেই মানুষের দুটি পা ভিন্ন তাঁর যাতায়াতের আদিমতম উপায় ছিল নদীপথ। দু’শো বছর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর আট বছর বয়সে পিতার সঙ্গে বীরসিংহ গ্রাম থেকে হাঁটাপথে কলকাতায় পৌঁছেছিলেন। আরো পনেরো বছর পরে ১৮৪৩ সালে জর্জ এভারেস্ট, যাঁর নামে হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম, তিনি দেরাদুন থেকে বরাবর নদীপথে কলকাতায় পৌঁছেছিলেন। সময় লেগেছিল ৩৫ দিন। তারও পনেরো বছর পরে ১৮৫৬ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নৌকা করে নদীপথে কলকাতা থেকে কাশী গিয়েছিলেন। যদিও তখন অল্প-বিস্তর রেললাইন পাতার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। নদীপথে কলকাতা থেকে কাশী যেতে দেবেন্দ্রনাথের সময় লেগেছিল দেড় মাস আর নৌকা ভাড়া লেগেছিল একশো টাকা। কিন্তু এখানে সেকালের হাঁটাপথ বা নদীপথ নয়, আমি বলব পুরনো কলকাতার সড়কপথে যাতায়াতের কথা, সড়ক পরিবহন বন্দোবস্তের বেড়ে ওঠবার কথা।
আমরা চলতি কথাবার্তায় একটা জমজ শব্দ প্রায়ই বলি, সেটা হল – ‘গাড়ি-ঘোড়া’। যেমন, হরতালের দিন রাস্তাঘাট শুনসান, গাড়ি-ঘোড়ার দেখা নেই – এরকম। কথায় ঘোড়ার আগে গাড়ি থাকলেও আসলে কিন্তু গাড়ির অনেক আগে ঘোড়া এসেছিল। মানুষ বা মালপত্র বইবার জন্য পশুশক্তির ব্যবহার হয়ে আসছে সভ্যতার সেই ঊষালগ্ন থেকেই। এখনো প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মাল পরিবহন তো বটেই, সাথে মানুষ পরিবহনের জন্যও গরুর গাড়ির ব্যবহার করা হয়। এখন এই আধুনিক জেট-গতির যুগে বিস্ময়কর লাগে, প্রায় দেড়শো বছর আগে ১৮৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনমোহিনী বালক নরেন্দ্রনাথকে নিয়ে বাগবাজার থেকে গরুর গাড়িতে চেপে মধ্যপ্রদেশের (এখন ছত্তিশগড়) রায়পুরে গিয়েছিলেন। কলকাতা থেকে রায়পুরের দূরত্ব প্রায় সাড়ে আটশো কিলোমিটার। বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত তখন রায়পুরে এটর্নি ছিলেন। সেযুগে স্থলপথে দূর-দূরান্তে যাওয়ার জন্য গোরুর গাড়ি ছাড়া আর উপায়ই বা কি ছিল? সেকথা থাকুক। গোরুর গাড়ির কথা পরে বলা যাবে। আপাততঃ ঘোড়ার কথা বলা যাক।
আধুনিক কোন শহরে যানবাহন বা পরিবহন ব্যবস্থার বিবর্তন বড় বিচিত্র, কলকাতার কথাই ধরা যাক। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গতিময় জনবহুল শহর, কিভাবে এখনকার আধুনিক গতি পেল সেকথা অবশ্যই জানতে ইচ্ছে করে। কলকাতা মোটেই কোন প্রাচীন শহর নয়। শহর কলকাতা নিতান্তই বৃটিশ যুগের, এবং কলকাতা শহরের বিকাশও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। এদেশে বানিজ্য করতে আসা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তাদের বানিজ্যকুঠী বানানোর জন্য বেহালার সাবর্ণ চৌধুরীদের কাছ থেকে সুতানুটি, কলকাতা ও গোবিন্দপুর নামে তিনটি গ্রামের জমিদারি সত্ত্ব কিনে নিয়েছিল। সেই তিনটি গ্রাম মিলেই এখনকার কলকাতা। এসব কথা স্কুল-কলেজের পাঠ্য ইতিহাসে লেখা আছে, তাই সেসব নিয়ে পুনরায় কিছু বলবার দরকার নেই। একটা শহরের বিকাশ ও আধুনিকতার মাপকাঠি হল সেটার জনবিন্যাস, শিক্ষাব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বানিজ্য। ইংরেজ কোম্পানী তিনটি গ্রামের জমিদারি সত্ত্ব কিনেছিল ১৬৯৮ সালের ১০ই নভেম্বর তারিখে। সেই দিনই সাবর্ণচৌধুরী ও কোম্পানীর মধ্যে বিক্রয় দলিল সই হয়েছিল।
কলকাতার নগরায়ন শুরু হয়েছিল আরো পঞ্চাশ বছর পর থেকে, ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পরে, কেননা এরপরেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বঙ্গদেশে নবাব সিরাজদৌল্লাকে যুদ্ধে পরাজিত ও হত্যা করে তাদের দখলদারি পোক্ত করেছিল। তো সেই নতুন নগর কলকাতার পত্তনের সময়কার চেহারাটা একবার দেখে নেওয়া যাক। ১৭০৬ খৃষ্টাব্দে মুঘল আমলে কলকাতা, গোবিন্দপুর ও সুতানুটি গ্রামের জরীপের তথ্য অনুযায়ী সেই তিনটি গ্রাম; যেগুলো নিয়ে পরে নগর কলকাতা গড়ে উঠেছিল, সেটার মোট জমির পরিমাণ ছিল ৫,০৭৬ বিঘা। যেটার মধ্যে ১,৫২৫ বিঘা ছিল ধানক্ষেত; ৪৮৬ বিঘায় ছিল বাগান; ২৫০ বিঘায় ছিল কলাগাছ; আর ১৮৭ বিঘাতে তামাক ও ১৫০ বিঘায় শাক-সবজির চাষ করা হত। ১১৬ বিঘাতে ছিল রাস্তা, খাল, পাতকুয়ো ও পুকুর; আর ১১৪৪ বিঘা জমি ছিল পতিত। এটাই ছিল পত্তনের সময়কার নগর কলকাতার চেহারা। তখন নগর কলকাতায় মাত্র দুটি স্ট্রিট আর দুটি লেন ছিল, একটাও রোড বা চওড়া রাস্তা ছিলনা। রাস্তা না থাকলে গাড়ি চলবে কিভাবে! অগত্যা তখন এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে বা এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায় যাতায়াত করবার উপায় ছিল সরু কাঁচা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে, কিংবা গোরুর গাড়ি করে, আর নয়তো পালকি করে। এই দুটি যানই তখন স্থলপথে যাতায়াতের জন্য আদি গ্রামীণ বন্দোবস্ত ছিল। সেকালের স্বচ্ছল লোকেদের পক্ষেই পালকি ব্যবহার করা সম্ভব ছিল। এমনকি কলকাতার নগরায়ন শুরু হওয়ার পরেও সম্ভ্রান্ত ও অর্থবান বাঙালী এবং সাহেবদের কাছে পালকি খুব আদরের ছিল। সেটা আদি নগর কলকাতার বাবু কালচারের একটা অন্যতম প্রধান চিহ্ন ছিল। তখন পালকির সওয়ারি হতেন দু’জন, সেটাকে বহন করতেন ছয়জন বেহারা, সাথে থাকতেন মালপত্র বওয়ার জন্য একজন কুলি, আর রাতের পথে একজন মশালচি।
সাহেবরা কলকাতা নগরীর পত্তন করেছিল মানে এরপরে দ্রুত গতিতে কলকাতা এগিয়ে গিয়েছিল, এমনটা মনে করবার কোন কারণ নেই। অন্ততঃ পত্তনের পরে আরো একশ বছর ধরে কলকাতা শহরের চেহারাটা প্রায় একই রকমের ছিল। তখন যাতায়াতের জন্য কয়েকটা সরু কাঁচা রাস্তায় গোরুর গাড়ি আর পালকি ভরসা ছিল। কলকাতার প্রথম বড় চওড়া খোয়া বাঁধানো রাস্তা সার্কুলার রোড তৈরী হয়েছিল ১৭৯৮/৯৯ নাগাদ, ফলে তখন থেকেই দ্রুত গতির ঘোড়ায় টানা গাড়ি কলকাতার রাস্তায় ছুটতে শুরু করেছিল। আর ঘোড়া মানেই গতি, দ্রুত গতির প্রতীক। এরপরে, আরো একশো বছর ধরে ঘোড়ায় টানা গাড়িই নগর কলকাতার একমাত্র দ্রুতগতির যানবাহন ছিল। কলকাতায় যাত্রীবাহী মোটর বাস চলতে শুরু করেছিল ১৯২২ সাল থেকে। তার আগে অবশ্য ট্যাক্সি চলা শুরু হয়েছিল ১৯০৬ সাল থেকে।
ঘোড়ার গাড়ির চল হওয়া শুরু হতেই কলকাতার জনজীবনে গতি এসেছিল। তারপরে অনেক রাস্তা তৈরী হয়েছিল। কলকাতার রাস্তা-ঘাট তৈরী করবার জন্য ইংরেজরা একটা ‘লটারি কমিটি’ গঠন করেছিলেন, তখন লটারির টাকায় কলকাতা শহরের নানা উন্নয়ন করা হত। লর্ড ওয়েলসলি তখন কলকাতার গভর্ণর জেনারেল ছিলেন। ১৮৩৬ সালের মধ্যে কলকাতায় অনেক প্রধান রাস্তার নির্মাণ হয়ে গিয়েছিল। স্ট্র্যান্ড রোড, কলেজ স্ট্রিট, আমহার্স্ট স্ট্রিট, মির্জাপুর স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট প্রভৃতি। ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার মোট রাস্তার পরিমান ছিল ১৮২ মাইল। সেই বছরই নগর কলকাতার আয়তন বৃদ্ধি পেয়েছিল। এন্টালি, বেনেপুকুর, ট্যাংরা, তপসিয়া, বালিগঞ্জ, ভবানীপুর, কালিঘাট, চেতলা, আলিপুর ও খিদিরপুর শহর কলকাতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু নগর কলকাতার সেইসব রাস্তা এখনকার মত মসৃণ এসফল্ট বা পিচ দিয়ে বাঁধানো ছিল না। সেগুলো খোয়া দিয়ে বাঁধানো ছিল। কারণ, ১৯১০ সালের আগে এসফল্ট বা বিটুমিনের ব্যবহার মানুষের জানা ছিল না। তাই তখন কলকাতার খোয়া বাঁধানো রাস্তা দিয়েই ঘোড়ার গাড়ি ছুটত।
সেকালে গাড়ি টানার কাজে ঘোড়াকে নানা উপায়ে ব্যবহার করা হত। উদ্দেশ্য ছিল দ্রুতগতিতে যাতায়াত করা। ব্রাউনলো নামের একজন সাহেব ‘ব্রাউন বেরি’ নামের একটা গাড়ি বের করেছিলেন। ১৮২৭ সালে তিনি সাবেকি পালকিতেই চারটি চাকা বসিয়ে সামনে ঘোড়া জুতে দিয়ে এক ঘোড়ায় টানা ব্রাউনবেরি গাড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন। সেই ব্রাউন বেরির ভাড়া ছিল প্রথম একঘন্টার জন্য চোদ্দ আনা, পরের প্রতি ঘন্টায় আট আনা, আর সারা দিনের জন্য নিলে ভাড়া পড়ত চার টাকা। তখন নানান ধরনের ঘোড়ার গাড়ি চালু ছিল। সেগুলোর মধ্যে সাহেবদের জন্য ছিল দামি গাড়ি, আর কোম্পানির সাধারণ কর্মচারিদের জন্য ছিল আলাদা আলাদা ধরণের গাড়ি। সেইসব গাড়ির নান ধরণের নাম ছিল – চেরট, ফিটন, ল্যান্ডো, টমটম, ছ্যাকরা গাড়ি ইত্যাদি। সেকালের কলকাতায় ঘোড়ার গাড়ি তৈরী করবার জন্য অনেক কোম্পানি খোলা হয়েছিল। সেকালের এক্কা গাড়ি, টমটম, ছ্যাকরা গাড়ি – এসব নামগুলো এখন প্রবাদের মত হয়ে গিয়েছে। বহু যুগ ধরে বাংলা বর্ণমালায় পড়া – “এক্কা গাড়ি ঐ ছুটেছে, ঐ দেখো ভাই চাঁদ উঠেছে” – বহুদিন কলকাতার রাস্তা থেকে অতীত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তবুও আজও ঘোড়ার গাড়িই বোধয় কলকাতার সবচেয়ে ‘নস্ট্যালজিক হেরিটেজ’। এককালে পুরনো কলকাতার বাবুরা ফিটনে চেপে ময়দানে হাওয়া খেতে যেতেন। আর সেই ঐতিহ্যের পথ বেয়ে এই সেদিনও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে সারি দেওয়া ফিটন গাড়ি দেখা পাওয়া যেত ময়দানে শখের হাওয়া-ভ্রমণের জন্য। ২০১২ সালের ২৬শে মার্চ তারিখ থেকে সেগুলিও বিদায় নিয়েছিল।
ইতিমধ্যে ১৮৫৪ সালের আগস্ট মাস থেকে হাওড়া স্টেশন থেকে হুগলী পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখনও শহর কলকাতার ভেতরে একসঙ্গে বেশি পরিমান মালপত্র বইবার বা একসঙ্গে অনেক মানুষের যাতায়াতের কোন ধরণের ব্যবস্থা ছিলনা। সেই অসুবিধা দূর হয়েছিল ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালু হওয়ার পরে। ১৮৭০ সালের মার্চ মাস থেকে তোড়জোড় শুরু করে, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বউবাজার, ডালহৌসি স্কোয়ার স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত ট্রাম লাইন পাতা হয়েছিল, আর তাতে ১৮৭৩ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি তারিখ থেকে ঘোড়ায় টানা ট্রাম গাড়ি চলা শুরু করেছিল। তখন দুটো বলিষ্ঠ ঘোড়া দিয়ে ট্রাম চালানো হত। এরপরে কলকাতার অনেক রাস্তায় ট্রাম লাইন পাতা হয়েছিল, এবং কলকাতা ট্রামওয়েস কোম্পানী গঠন করা হয়েছিল। ঘোড়ায় টানা ট্রামই কলকাতার প্রথম গণপরিবহন ব্যবস্থা হয়ে উঠেছিল। ১৮৯০-৯১ সালে কলকাতায় ট্রাম টানবার জন্য ঘোড়ার সংখ্যা ছিল একহাজার, সেগুলো সবই শীতপ্রধান দেশ থেকে নিয়ে আসা বেশ বলবান ঘোড়া ছিল। পরবর্তী প্রায় ত্রিশ বছর ধরে কলকাতায় ঘোড়ায় টানা ট্রামের ব্যবস্থা চালু ছিল। অবশেষে কলকাতার ঘোড়ায় টানা ট্রামের যুগ শেষ হয়েছিল ১৯০২ সালে পৌঁছে। ১৯০২ সালের ২৭শে মার্চ তারিখে কলকাতার প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রামটি ধর্মতলা-খিদিরপুরের পথে চলতে শুরু করেছিল। এর আগে কিছুদিন পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি পথে বাষ্পীয় ইঞ্জিন দিয়ে ট্রাম চালানো হয়েছিল। আর এখন তো কলকাতার কয়েকটা মাত্র পথে ট্রাম চলে।
১৮৮৬ সালে জার্মানীতে মোটরগাড়ি আবিষ্কার হওয়ার পরবর্তী দশ বছরের মধ্যেই কলকাতার রাস্তায় মোটর গাড়ি দেখা গিয়েছিল, আর তার দশ বছর পরে ১৯০৬ সাল থেকে কলকাতার রাস্তায় ট্যাক্সি চলাচল শুরু হয়েছিল। ১৯৪০/৪৫ সাল নাগাদ কলকাতায় ট্যাক্সির ভাড়া ছিল কমপক্ষে আট আনা, তারপরে প্রত্যেক ১/৪ মাইলের জন্য দু’আনা করে। তখন যাতায়াতের জন্য কলকাতায় প্রধান উপায় ছিল ট্রাম। কিন্তু শহরের বাইরে, দূরে যাওয়ার সমস্যা ছিল, কারণ ট্যাক্সিতে খরচ বেশি হত। অবশেষে ১৯২২ সালে কলকাতায় চালু যাত্রীবাহী মোটর বাস চালু হয়েছিল। এর অনেক আগে, যখন মোটর গাড়ি আবিষ্কারই হয়নি, তখন কলকাতায় কিছুদিনের জন্য ঘোড়ায় টানা বাস চলেছিল বলে জানা যায়। ১৮৩০ সালে ধর্মতলা থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত ঘোড়ায় টানা বাস চলেছিল। কিন্তু সেটা কতদিন চলেছিল, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। ১৯২২ থেকে মোটর বাসই কলকাতার প্রধান গণপরিবহন ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল। ১৯২৪ সালে চালু হওয়ার সময়ে কলকাতায় বাসের সংখ্যা ছিল ৫৫টি। ১৯২৫ সালে সেই সংখ্যাটা বেড়ে ২৮০ হয়েছিল। ১৯২৬ সালে কলকাতায় প্রথম দোতলা বাস চালু হয়েছিল। কলকাতার প্রথম দোতলা বাসটি শ্যামবাজার থেকে কালিঘাট পর্যন্ত চলেছিল। কিন্তু প্রথম চালু হওয়া দোতলা বাসগুলি বছর কুড়ি আগে দেখা বা পুরনো চলচ্চিত্রে দেখতে পাওয়া বাসের মত ছিল না। সেই বাসগুলির ওপরে কোন ছাদ বা ছাউনি ছিল না। বর্ষাকালে সেগুলির দোতালায় যাত্রীরা ছাতা মাথায় বসে থাকতেন। বিংশ শতকের আশির দশক পর্যন্ত কলকাতার বেশ কিছু প্রধান রাস্তায় দোতলা বাস চলেছিল। তারপরে ১৯৯০ সাল থেকে সেই সময়ের রাজ্য সরকার কলকাতার রাস্তায় দোতলা বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল। এখনও অনেকেই সেই দোতলা বাসে চড়বার স্মৃতি রোমন্থন করে তৃপ্তি লাভ করেন। ১৯৪৮ সাল থেকে কলকাতার রাস্তায় সরকারী বাস চলাচল ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল, সেই বছরই স্টেট ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন গঠিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে কলকাতার রাস্তায় মিনিবাস চালু হয়েছিল। সেই সময়ে যাঁরা মিনিবাসে চড়েছিলেন তাঁদের হয়ত মনে থাকবে যে, সেগুলির উচ্চতা বেশ কম ছিল; যার ফলে নিতান্ত সাধারণ উচ্চতার যাত্রীকেও মিনি বসে দাঁড়িয়ে যেতে হলে সারাক্ষণ ব্যথা সহ্য করেও ঘাড় নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। কলকাতার এই গণপরিবহন ব্যবস্থার বয়স আপাততঃ একশো বছরেরও কম।
কলকাতা বড় বিচিত্র শহর। এই জেটগতির যুগে দ্রুতগতির আধুনিক পরিবহন বন্দোবস্তের পাশাপাশিই কলকাতায় মানুষ টানা রিক্সার সহাবস্থান দেখতে পাওয়া যায়। ২০০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলকাতা থেকে মানুষ টানা রিক্সার চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। এরপর থেকে ধীরে ধীরে কলকাতা থেকে সেই ঔপনিবেশিক চিহ্নটি প্রায় বিদায় নিয়েছে। যদিও এখনও কলকাতার এখানে ওখানে হাতে টানা কিছু রিক্সা দেখতে পাওয়া যায়। হাতে টানা রিক্সার জন্ম হয়েছিল জাপানে, ১৮৬৯ খৃষ্টাব্দে। জাপানী ভাষায় এই গাড়িকে বলা হত ‘জিন-রি-কি-শ’, অর্থাৎ মানুষ টানা গাড়ি। ভারতে প্রথমে এটাকে বলা হত জিন রিকশ। সেটা ছোট হয়ে রিক্সা হয়েছে। সিমলাতে এই গাড়ি প্রথম দেখা দিয়েছিল ১৮৮০ সালে। লেডি ডাফরিনের আত্মকথায় সিমলার হাতে টানা রিক্সার কথা পাওয়া যায়। কলকাতায় চিনারা প্রথম নিজেদের ব্যবহারের জন্য রিক্সার প্রচলন করেছিলেন ১৯০০/১৯০১ সন নাগাদ। তারপরে চিনারা, ভাড়ায় রিক্সা চালানো শুরু করেছিলেন ১৯১৩/১৪ সাল থেকে। ভারতীয়রা রিক্সার ব্যবসা শুরু করেছিলেন ১৯২০ সাল থেকে। ইংরেজ আমলে টানা রিক্সার ভাড়া ছিল এক মাইল পর্যন্ত তিন আনা। তার পরের প্রতি মাইলের জন্য তিন আনা। সময়ের হিসাবে একঘন্টার জন্য ছ’আনা। এটা ছিল দু’জনের বসবার হিসাব। একজন হলে দেড় আনা প্রতি মাইল, একঘন্টার জন্য তিন আনা।
স্বল্প দূরত্বের পথে যাতায়াতের জন্য তিন চাকার সাইকেল রিক্সা এখনও মানুষের পরিহার্য বাহন। কলকাতার রাস্তায় সাইকেল রিক্সা চালু হয়েছিল ১৯৪০ সাল নাগাদ। এর পঞ্চাশ বছর আগেই, ১৮৮৯ সালেই অবশ্য দু’ চাকার ব্যক্তিগত বাহন বাই-সাইকেল প্রচলিত হয়ে গিয়েছিল।
সেকালের কলকাতায় মানুষ ও মালপত্রের বহন ছাড়াও চিঠিপত্র বা ডাক দূর দূরান্তে পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত কিরকম ছিল সেটাও একবার দেখে নেওয়া যাক। পাঠ্য ইতিহাসে পোড়ানো হয় যে, শেরশাহ ভারতে ঘোড়ার মাধ্যমে ডাক চলাচলের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন। যদিও তখন সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত চিঠিপত্র বা ডাকের ব্যবহারই জানতেন না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনকালে ভারতের ডাকব্যবস্থা আধুনিকরূপে গড়ে উঠেছিল। তখন দূর-দূরান্তে, অন্য প্রদেশে ডাক নিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষ বওয়ার মত একই রকমের ব্যবস্থা ছিল; অর্থাৎ পালকি, গোরুর গাড়ি ও ঘোড়ায় টানা পালকি গাড়ি।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

More News Of This Category
https://slotbet.online/