#পর্ণনরদাহ
হিন্দু শাস্ত্রে মৃত্যুর পর শরীরটিকে পঞ্চত্ব প্রাপ্তির জন্য শ্মশান ভূমিতে নিয়ে দাহ করতে হয়। কিন্তু দৈববিঘ্নতা বশতঃ কোনো কারণে দেহ প্রাপ্তি না ঘটলে সেক্ষেত্রে এই “পর্ণনরদাহ” করতে হয়। ব্যাঘ্র ভাল্লুক ইত্যাদি জন্তুতে খেয়ে ফেলা, নদী বা সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার পরে দেহ না পাওয়া, কোন সংক্রামক ব্যাধিতে মৃত্যু হলে দেহ প্রাপ্ত না হওয়া, ১২ বছর নিখোঁজ থাকার পরেও কোন সন্ধান না পাওয়া, আত্মহত্যা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বৈধদাহ করবার জন্য এই “পর্ণনরদাহ” করতে হয়। পর্ণ কথার অর্থ হলো পাতা নর শব্দের অর্থ হলো মানুষ এক্ষেত্রে দেহ; অর্থাৎ পাতার তৈরি দেহ। এই পাতা হলো পলাশ পাতা। ৩৬০ টি পলাশপাতা দ্বারা একটি মনুষ্য-প্রমাণ দেহ গঠন করে সেই দেহটিকে যথাবিধি চিতায় দাহ করতে হয়। কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতেই এই “পর্ণনরদাহ” করতে হয়। দাহকার্যের পর তিন রাত্রি অশৌচ গ্রহণ করে চতুর্থ দিবসে শ্রাদ্ধ করতে হয়। তবে অশৌচ চলাকালীন যদি পর্ণনরদাহ করা হয় তাহলে যে কোন তিথিতেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই “পর্ণনরদাহ” করতে হবে এবং মৃত্যুকে প্রথম দিন ধরে যেই দিনে শ্রাদ্ধ হওয়ার কথা সেই বিহিত দিনেই শ্রাদ্ধ করতে হবে। এটাই শাস্ত্রীয় বিধান।
প্রথমে শরপত্র (ফুলের দোকনে যেই লম্বা পাতার টুকরো দিয়ে মালা গাঁথে, সেটি হলো শরপাতা) দ্বারা একটি মনুষ্য প্রমাণ শরীর গঠন করতে হয়। এবার ৩৬০টি পলাশ পাতা দিয়ে সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করতে হবে। এই পলাশ পাতাগুলি দেওয়ার নিয়ম হল- মাথায় ৪০টি, গলায় ১০টি, বুকে ৩০টি, পেটে ২০টি, দুই হাতে ৫০+৫০=১০০টি, দুই হাতের আঙুলে ৫+৫=১০টি, লিঙ্গ এবং অন্ডকোষে ৬+৪=১০টি, দুই উরুতে ৫০+৫০=১০০টি, দুই পায়ে ১৫+১৫=৩০টি, দুই পায়ের আঙুলে ৫+৫=১০টি সর্বমোট ৩৬০টি। পাতাগুলি বাঁধতে হবে মেষলোমের তৈরি সুতো দিয়ে, সম্পূর্ণ দেহে যবের চূর্ণ দিয়ে প্রলেপ দিতে হবে। মাথায় একটি নারকেল দিয়ে সম্পূর্ণ একটি মানুষের আকৃতি দেওয়ার পর, ঘি মাখিয়ে স্নান করানো, পিণ্ডদান, চিতা গঠন ইত্যাদি সমস্ত ক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এবার একটি শবদেহকে যেভাবে দাহ করতে হয় ঠিক সেই ভাবেই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গঙ্গায় অস্থি বিসর্জন করতে হবে। এই দাহ ক্রিয়া না করলে শ্রাদ্ধের অধিকারী হওয়া যায় না। অর্থাৎ যেই ব্যক্তির কোন দেহ পাওয়া না যাবে সেক্ষেত্রে এই “পর্ণনরদাহ”ই একমাত্র শাস্ত্রীয় বিধি।
https://slotbet.online/