‘ননদিনী রায়বাঘিনী’ কথাটা সবাই শুনেছেন। কিন্তু এই রায়বাঘিনী কথার পিছনে যে ইতিহাস তা অধিকাংশের অজ্ঞাত। কারণ বাঙালি সবচেয়ে অজ্ঞ বাঙালির ইতিহাস নিয়ে, সে বাবর আকবর নিয়েই ছাত্র জীবন কাটিয়েছে।
ভবশঙ্করী ছিলেন এক গ্রাম্য জমিদারের কন্যা। ছোটবেলা থেকে অসিখেলা, ঘোড়ায় চড়া, তীরন্দাজিতে পারদর্শিনী ছিলেন। ভুরশুটের রাজা রুদ্রনারায়ণ তাঁর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে বিবাহ করেন। ভুরশুট ছিল হাওড়া ও হুগলি জেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রাজ্য।
রাজা রুদ্রনারায়নের মৃত্যুর পর রাজ্যের শাসনভার আসে তাঁর ওপর। তিনি দক্ষতার সাথে রাজ্যশাসন পরিচালনা করেন। এইসময় ভুরশুটের অধিবাসী পাঠান সর্দার ওসমান খাঁ মোগল সম্রাটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়। ওসমান যুদ্ধের জন্যে রানীর সাহায্য চায় কিন্তু ভবশঙ্করী রাজী না হলে সে ভুরশুট রাজ্য আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে।
ওসমান খানের সেনারা হিন্দু সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে ভুরশুট রাজ্যে প্রবেশ করেন। এছাড়াও বহু পাঠান সৈন্য ব্যবসায়ী, পর্যটক, ফকির ইত্যাদি ছদ্মবেশে প্রবেশ করেন। কিন্তু বর্তমান হাওড়া জেলার আমতার দুর্গে থাকা সেনা ইউনিটের গোয়েন্দারা পাঠান সেনাদের চিনতে পারে। তারাই রানী ভবশঙ্করীকে পাঠান সেনার আগমনের খবর পৌঁছে দেয়।
রানী ভবশঙ্করী এই সংবাদ পাওয়া মাত্রই পাঠান সেনাদের প্রতিহত করার পরিকল্পনা করেন। সেই মতো তিনি আশেপাশের দুর্গগুলি থেকে দক্ষ সেনাদের ডেকে নেন এবং তাদেরকে আশেপাশের জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে বলেন। তিনি নিজের সঙ্গে বিস্বস্ত নারী সেনাদের রাখেন। রাতে রানী ভবশঙ্করী যুদ্ধের পোশাক পরে, অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূজায় বসেন। পূজায় বসার সময় তিনি নিজের শরীরে একটি সাদা কাপড় জড়িয়ে নেন। গভীর রাতে ওসমান খানের সেনাবাহিনী রানী ভবশঙ্করীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মন্দিরে আক্রমণ করেন। কিন্তু সেনারা প্রস্তুত থাকায় তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। রানী ভবশঙ্করীর নেতৃত্বে থাকা সেনারা পাঠান সেনাদের খণ্ডবিখণ্ড করেন। ওসমান খান পরাজিত ও নিহত হন। পিছনে থাকা পাঠান সেনাদের একটি দল কিছু দূরের গ্রামে থাকা একটি শৈব সাধুদের আখড়ায় আক্রমণ করেন। কিন্তু শৈব সাধুরা পাঠানদের তরোয়ালের জবাব তরোয়ালের দ্বারাই দেন। সেখানে শৈব সন্ন্যাসীরা বহু পাঠান সৈন্যকে হত্যা করেন।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সেনা প্রশিক্ষণের শিবির স্থাপন করেন, যেগুলি রানী ভবশঙ্করী নিজে তদারকি করতেন। এরপরেই পাঠান সেনাদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াইয়ের কথা, বাঘের মতো ক্ষিপ্রতায় তাঁর যুদ্ধ করার কাহিনী ভুরীশ্রেষ্ঠ রাজ্যের লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁকে ‘রায়বাঘিনী’ উপাধি দেওয়া হয়।
যদি রানী ভবশঙ্করী বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে ওসমান খানকে পরাজিত না করতেন, তাহলে ভুরশুট রাজ্যে বিজাতীয় শাসন শুরু হতো এবং হিন্দুর মঠ-মন্দির, হিন্দুর সংস্কৃতি, সুখ-শান্তি সব ধ্বংস হয়ে যেত।
পশ্চিমবঙ্গ পেজ থেকে সংগৃহীত।
#love
https://slotbet.online/