ঈসাহারা নিউজ : মহাকাব্য ‘মহাভারত’-এর মূল ঘটনাগুলি ঘটতো না যদি দ্রৌপদী না থাকলে। এক অর্থে ভারতকথার ‘ফেম ফেটাল’ তিনিই। দ্রৌপদী এমন এক নারী, যাঁকে পাওয়ার জন্য পুরুষ যে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত। কী ছিল দ্রৌপদীর গুণাবলি? কী ছিল তাঁর নিজের মানসিকতা? এবং সর্বোপরি, তিনি ঠিক কে? এ সমস্ত কিছুর উত্তর হয় মহাভারতে রয়েছে, নয়তো ছড়িয়ে রয়েছে অন্য পুরাণ-গ্রন্থগুলিতে। তবে এই সুবিশাল কাব্যের ঠিক কোথায় সেই সব কথা উল্লিখিত, তা সব সময়ে হদিশ করা যায় না। সেই কারণেই এখানে সন্নিবিষ্ট হল পাঞ্চালী-সংক্রান্ত ১০টি স্বল্প-আলোচিত তথ্য।
১/ ‘নারদ পুরাণ’ এবং ‘বায়ু পুরাণ’ অনুযায়ী, দ্রৌপদী একাধারে ধর্ম-পত্নী দেবী শ্যামলা, বায়ু-পত্নী দেবী ভারতী এবং ইন্দ্র-পত্নী দেবী শচী, অশ্বীনিকুনারদ্বয়ের পত্নি ঊষা এবং শিব-পত্নী পার্বতীর অবতার।
২/ বিগত জন্মে তিনি ছিলেন রাবণকে অভিসম্পাত-প্রদানকারী বেদবতী। তার পরের জন্মে তিনি সীতা। তাঁরই তৃতীয় ও চতুর্থ জন্ম দময়ন্তী এবং তাঁর কন্যা নলযানী। পঞ্চম জন্মে তিনি দ্রৌপদী।
৩/ দ্রৌপদীর বহু নাম। পাঞ্চাল রাজপুত্রী দ্রৌপদী পাঞ্চালী নীমেই সমাধিক পরিচিতা। তিনি যজ্ঞকুণ্ড-জাতা। সেকারণে তাঁরা নাম যাজ্ঞসেনী। অজ্ঞাতবাস পর্বে তাঁর নাম ছিল সৈরিন্ধ্রী।
৪/ পূর্বজন্মে দ্রৌপদী ১৪টি গুণসম্পন্ন স্বামীর জন্য তপস্যা করেন। শিব তাঁকে সেই মতো বরদানও করেন। কিন্তু একটি মানুষের মধ্যে এতগুলি গুণ থাকা সম্ভব নয়। তখন শিব তাঁকে জানান, পাঁচজন মানুযের মধ্যে এমন গুণের সমাহার ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে তাঁকে পঞ্চস্বামী বরণ করতে হতে পারে।
৫/ দ্রৌপদী যজ্ঞকুণ্ড-জাতা। কুণ্ড থেকে তিনি পূর্ণযৌবনা অবস্থাতেই উঠে আসেন।
৬/ দক্ষিণ ভারতে দ্রৌপদীকে দেবী কালিকার অবতার মনে করা হয়। তিনি দুষ্ট রাজাদের সংহারকল্পে আবির্ভূত হন।
৭/ মহাভারতের ভাষ্যকারদের অনেকেই এ কথা বলেছেন যে, পঞ্চস্বামীর প্রতি তাঁর সমান প্রেম ছিল না। অর্জুনই ছিলেন তাঁর প্রকৃত প্রেমিক।
৮/ মহাভারত-এর সবথেকে আলোচিত অংশ সম্ভবত দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ। শ্রীকৃষ্ণ-সংক্রান্ত কাহিনিটিই সাধারণত বলা হয় এ ক্ষেত্রে। কিন্তু বস্ত্রহরণের আরও একটি কাহিনি রয়েছে। ‘শিব পুরাণ’ থেকে জানা যায়, দ্রৌপদী এই চরম অসম্মান থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন দুর্বাসা মুনির বরে। সেই কাহিনি অনুযায়ী, দুর্বাসার চিরবাস গঙ্গাবাহিত হয়ে অপমানিতা দ্রৌপদীর কাছে পৌঁছয়। দ্রৌপদী সেই বস্ত্র থেকে খানিকটা ছিঁড়ে নেন। দুর্বাসার বরে সেই ছিন্ন বস্ত্রখণ্ড অনন্তে বস্ত্রে পরিণত হয়।
৯/ দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরে দুর্যোধন অংশগ্রহণ করেননি। কারণ তিনি তাঁর পত্নী ভানুমতীকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি আর বিবাহ করবেন না।
১০/ গোটা মহাভারত পাঠের পরে এই প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, কার উপরে আস্থা রাখতেন দ্রৌপদী? তাঁর পঞ্চস্বামীর উপরে তাঁর যে যথাযথ আস্থা ছিল না, তা অনেকবারই উল্লিখিত রয়েছে। সমস্ত উত্থান-পতনে তাঁর পাশে ছিলেন পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ, তাঁর সখা।