দুনিয়ার সামান্য জীবন নিয়ে, ব্যস্ত মানুষরা মনে করে থাকে।
দুনিয়াতে বিয়ে-শাদী, ঘর সংসার, সন্তানাদি, জায়গা জমি এবং ক্ষমতা এগুলোই গুরুত্বপূর্ণ। তারা তাদের সমস্ত জীবন এগুলোর পেছনেই ব্যয় করে।
অথচ এগুলোকে ভোগ করার জন্য তাদেরকে শুধুমাত্র সামান্য কিছু সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সর্বপ্রথম মানুষকে তার চিরস্থায়ী জীবন কায়েম করতে হবে।
যদি কেউ আল্লাহর সাহায্যে এবং নিজের চেষ্টায়। তার চিরস্থায়ী জীবনকে কায়েম করতে পারে। অর্থাৎ মৃত্যুর পরের জীবনকে স্থায়ী করতে পারে।
শুধুমাত্র তখনই সে দুনিয়াদারি প্রতি মনোযোগ দিতে পারে। বাকি যতটুকু সময় সে পৃথিবীতে থাকবে।
কারণ সে নিজের পরবর্তী জীবন স্থায়ী করেছে।তাই দেহ ত্যাগ করার পর তার কোন সমস্যা নেই। সে আবার পরবর্তীসুখী জীবন বা জান্নাতি জীবন পাচ্ছে।
আর যদি এই জীবনে বসে পরের জীবনকে স্থায়ী না করে, উল্টো এই সময়টুকু দুনিয়াদারির পেছনেই নষ্ট করে ফেলে। তাহলে তো তাদের আর কিছুই বাকি থাকলো না।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন। যারা শুধু দুনিয়ার জীবনেই নিজের কল্যাণ কামনা করে। তাদের জন্য পরকালে আর কিছুই বাকি থাকে না।
যেটুকু সময় তাদেরকে আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছে। তা তারা দুনিয়ার ব্যস্ততায় শেষকরে ফেলেছে। চিরস্থায়ী জীবন কায়েম না করে।
তাদের জন্য শুধু দুনিয়ার জীবনটাই। তাদের মৃত্যুর পর কোন কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা নেই।
তারা শুধু দুনিয়াকে চেয়েছে। দুনিয়ার পেছনেই কাজ করেছে। তাই তাদের জন্য শুধু দুনিয়াটাই। আখেরাতে আর কিছুই তাদের অবশিষ্ট নেই।
এই প্রসঙ্গে আল্লাহ কোরআনের মধ্যে মানুষকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন।
হে আমাদের রব তুমি আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে আখেরাতের জীবনেও কল্যাণ দান করো। সর্বোপরি তুমি আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করো।
যাতে মানুষ শুধু দুনিয়ার জীবনে তাদের সময় নষ্ট না করে, আখেরাতের জীবন কায়েম করে এবং আগুনের আজাব থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত আর কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেজগারদের জন্য শ্রেষ্ঠতর।সূরা আল আনাম ৩২।
আর এই ক্রীড়া কৌতুকের পেছনেই মানুষ তাদের সমস্ত জীবন ব্যয় করতেছে।
তাই আগে চিরস্থায়ী জীবন কায়েম করার পেছনে সময় দিবেন? নাকি যেটুকু সময় আছে তাও দুনিয়াদারিতে ব্যয় করে শেষ করে ফেলবেন?? সেটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।
এখন হয়তো আপনারা আমাকে বলবেন চিরস্থায়ী জীবন কায়েম হয়েছে কিনা তা আমরা কি করে বুঝতে পারব???।
তাহলে আমার উত্তর হবে সর্বপ্রথম আপনাকে জানতে হবে। কায়েম শব্দটির অর্থ কি?? কায়েম শব্দের অর্থ প্রতিষ্ঠিত করা বা স্থায়ী করা। আর যা কিছু প্রতিষ্ঠিত হয় তা মানুষ দেখতে পায়।
আপনার নফসের সাথে আপনার রুহের যখন সালাত কায়েম হবে অর্থাৎ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং তা স্থায়ী হবে। আপনি অবশ্যই তা বুঝতে পারবেন। কেননা আপনি রুহের দ্বারাই পরিচালিত হবেন।রুহ শব্দের অর্থ হল আদেশ।অর্থাৎ আপনার নফস কেবল রবের আদেশে পরিচালিত হবে।
আর যারা রবের আদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়। তখন দুনিয়ার মানুষের বানানো নিয়ম নীতি।আইন কানুন তাদের উপর চলে না।তখন তারা কেবল রবের আদেশেই নিজের জীবন পরিচালিত করে।
চিরস্থায়ী একমাত্র রব। রব ব্যতীত কোন কিছুই স্থায়ী নয়।সেই রবের সাথে আপনার সালাত কায়েম করতে হবে অর্থাৎ যোগাযোগ স্থায়ী করতে হবে। তবেই আপনার চিরস্থায়ী জীবন কায়েম হবে।
রবের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলে। রব আপনাকে ভেতর থেকে, কখন কি আদেশ করে, কখন কি নিষেধ করে, আপনি তা বুঝতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী বাকি জীবন অতিবাহিত করবেন।
যখন আপনার সালাত কায়েম হবে অর্থাৎ রবের সাথে যোগাযোগ স্থায়ী হবে।কেবল তখনই আপনার চিরস্থায়ী জীবন প্রতিষ্ঠিত হবে।
তখন আপনার চোখের পর্দা দূর হয়ে যাবে। আপনি স্পষ্ট সব দেখতে পাবেন বুঝতে পারবেন।
তখন আপনি আপনার এই বাহ্যিক জীবনের সমস্ত কর্মের দিক নির্দেশনা আপনার ভেতর থেকেই পাবেন। আপনার ভেতর আপনাকে দিক নির্দেশনা দিবে।
আপনার কখন কি করা উচিত।আপনার জন্য যখন যা প্রয়োজন। আপনি যখন যা কিছুর উপযুক্ত হবেন। আপনার নফস আপনাকে দিয়ে তাই করাবে।
আর আপনাকে অবশ্যই তাই করতে হবে। কারণ আপনি আপনার রবের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। আপনি আপনার রবের হুকুমের গোলাম।
সেই আদেশ আপনার জন্য যত কঠিনই হোক না কেন আপনাকে তা করতে হবে। তখন আপনি খুশি মনে তা করবেন কারণ আপনার সঙ্গে সব সময় রব রয়েছে।
যেমন হযরত মুসা আলাই সাল্লাম কে আল্লাহ যখন আদেশ করেছেন। হে মুসা তুমি ফেরাউনের কাছে যাও গিয়ে তাকে রবের দাওয়াত দাও।
তখন মুসা নবী চিন্তায় পড়ে গিয়েছে তিনি কি করে এই কাজ করবেন? তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। হে আমার রব তুমি আমার বুক প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার কাজ সহজ করে দাও।এবং আমার জিব্বার জড়তা দূর করে দাও। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। এবং তোমার কাছ থেকে আমাকে সাহায্য কারি শক্তি দাও।
তারপর আল্লাহ ওনাকে সাহায্যকারী শক্তি হিসেবে তার ভাই হারুনকে দিয়েছেন এবং কিছু অলৌকিকতা শিক্ষা দিয়েছেন এবং হিম্মত সাহস দিয়েছেন। মুসা আলাইহিস সালাম গিয়ে সেই কাজ করেছে এবং সফল হয়েছে।
এভাবেই আল্লাহর নবীগণ আল্লাহর রাসূলগণ আল্লাহর বন্ধুগণ আল্লাহর ওলীগণ রবের ইচ্ছায় কাজ করে গেছেন বা করে থাকেন।
ইউসুফ নবী কি আল্লাহর ইচ্ছায় ১০ বছর কারাবরণ করেননি?? আল্লাহ চাইলে উনার প্রিয় বান্দাকে কারামুক্ত করতে পারতেননা?? বরং আল্লাহ নিজেই চেয়েছেন। তাই ইউসুফ নবী বিনা দ্বিধায় আল্লাহর ইচ্ছা মেনে নিয়েছেন। ওনার শিশু বেলায় ওনার ভাগ্যে কুয়াতে নিক্ষেপ হওয়া লিখে রাখেননি?? অবশ্যই আল্লাহ তাও লিখে রেখেছেন?? শিশু বেলা উনাকে কুয়াতে নিক্ষেপ হতে হয়েছে।
আপনি যখন আপনার ভেতরের রবের আদেশ দ্বারা পরিচালিত হবেন। তা সাধারণ মানুষের বোধগম্যের বাহিরে। সাধারণ মানুষের অদৃশ্যের জ্ঞান সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। কেননা তারা নিজের ভেতরের রবের সাথে সালাত কায়েম করতে পারেনি অর্থাৎ জন্মের পর থেকে আজ অব্দি তাদের ভেতরের রুহের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।
সালাত মানে হল যোগাযোগ। আর কায়েম মানে হলো স্থায়ী। সালাত কায়েম মানে হল, আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থায়ী করা।
তারা মূলত দজ্জাল দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। দাজ্জালের প্রতারণা থেকে তাদের বাঁচার কোন উপায় নেই।কেননা তারা জন্ম থেকে দজ্জালদেরকে পুরোপুরি ভাবে বিশ্বাস করেছে। কোনরূপ যাচাই-বাছাই বা গবেষণা করা ছাড়াই।
দজ্জাল শব্দের অর্থ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি।অর্থাৎ তারা যা কিছু বলে সবই মিথ্যা।
দাজ্জালের প্রতারণায় পড়ে সাধারণ মানুষ রবের সাথে নিজেদের সালাত কায়েম করতে পারেনি অর্থাৎ তারা তাদের চিরস্থায়ী জীবন কায়েম করতে পারেননি।
দজ্জাল বা প্রতারকরা তো নিজের সম্পর্কেই কিছু জানে না। তারা নিজেকেই চেনে না। নিজের নফসকে চেনে না। তারা কোন জাতীয় নফস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে সে বিষয়ে কোন ধারনা কোন জ্ঞান নেই ।
তারা কি করে আপনাকে চিরস্থায়ী জীবন দিবে। তাদের তো কোন চিরস্থায়ী জীবন নাই।তারা তো সীয়ো রবের সাথে সালাত কায়েম করতে পারেনি। রবের আদেশে জীবন পরিচালনা করে না।তারা নিজেরাই তো মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে চিরস্থায়ী ধ্বংসযজ্ঞে পৌঁছে যাবে।
ভবিষ্যতে দজ্জাল আসবে এটাই জাতিকে দেওয়া দজ্জালের সবচেয়ে বড় ধোঁকা!! দজ্জাল ভবিষ্যতে আসবেনা।বরং দজ্জালের মধ্যেই জাতি বসবাস করতেছে।
আর দজ্জালদের ধোঁকায় পড়ে নিজেদের মূল্যবান জীবনটা শেষ করতেছে।মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে অবশ্যই প্রত্যেক মানুষের সামনে তা পরিষ্কার হয় কিন্তু তখন তাদের কিছুই করার থাকেনা।
তাই সময় থাকতে সাবধান হোন নিজেকে জানুন। নিজেকে জানার চেয়ে পৃথিবীতে আর কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। যারা নিজেকে চিনতে পেরেছে কেবল তারাই আপনাকে নিজেকে চেনার পথ দেখাতে পারে।
এছাড়া বাকি সবাই হলো দজ্জাল অর্থাৎ প্রতারক। তাদের সমস্ত কিছুই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। তারা নিজের সম্পর্কেই কিছু জানে না।তাদের ধোকায় পড়ে দুনিয়ার এ সামান্য সময়টুকু শেষ করে দেবেন না। সজ্ঞানে আসুন চৈতন্য ফিরে পান নিজেকে জাগান।
মনে রাখবেন আমার কোন কিছু বলা বা লেখার সাধ্য নেই। যদি রব আমাকে দিয়ে তা না করান। রব নিজেই নিজের সত্য প্রকাশ করে। মানুষের সাধ্য নেই তা করার।যে রবের কলম হতে পারে। তার মাধ্যমেই রব নিজেকে প্রকাশ করে।মনে রাখবেন এই পৃথিবীতে মানুষই আল্লাহর একমাত্র দলিল।
রব নিজেই সত্য নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যায়। মানুষ দজ্জালের ধোঁকায় পড়ে সত্য থেকে নিজেদের মুখ ঘুরিয়ে রাখে।
তাইতো কোরআনে আল্লাহ বলেন
আমি ততক্ষণ কোন জাতির উপর আযাব নাযিল করি না। সে জাতির মাতৃভাষায় আমার সতর্ককারী বার্তা বাহক না পাঠিয়ে।যারা নিয়মিত কোরআন পড়েন তারা অবশ্যই এই আয়াতটি জানেন।