Email : esaharanews@gmail.com
  • অন্যান্য
নোটিফিকেশন
আজকের সর্বশেষ সবখবর

এ জগতে সবাই একা

ESARA NEWS
ডিসেম্বর ৩, ২০২৩ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ । ৬৩ জন
Link Copied!

এ জগতে সবাই একা, চির একা— আজ যারা আছে, কাল তারা কোথায় চলে যাবে! এই সত্যটি যেদিন মানুষ অন্তরে অনুভব করে, জানে— তখনই হৃদয়বন্ধুর জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে, চারদিকে তাঁকে অন্বেষণ করে।
একা একা তাঁকে ডাকে, আর কাঁদে।
জগতের সকল সম্পদই ক্ষণস্থায়ী— কিন্তু মানবাত্মা চিরন্তন। এই দুদিনের খেলা ফুরিয়ে গেলে সে তখন কি নিয়ে থাকবে? সেজন্য অনন্তকালের সঙ্গী ভগবানকে দিয়ে তার সবচেয়ে বেশি প্রয়ােজন।
কিন্তু সবচেয়ে প্রয়ােজন যাঁকে দিয়ে, মানুষ তাঁকে চেনে না, জানে না। বার বার আসে আর যায়, আর নানা দুঃখ, শােক, ব্যাধি, মৃত্যুর ক্লেশ অনুভব করে।

অনেক কুলীন পন্ডিত বিদ্বান ধনী দেখেছি— মুখে তারা অনেক বড় কথা বলেন, কিন্তু মনে বড় ছোট।
বড় স্বার্থদুষ্ট তাদের মন।
এর কারণ তারা বিরাট থেকে বিচ্ছিন্ন। সেজন্য ওরা বচনে বৈভবে বড় হয়েছেন, আচরণে বড় নন।
এ দোষ রাজনৈতিক নায়কদের মধ্যে ভয়ঙ্কর, মঞ্চে দাঁড়িয়ে যাঁরা সাম্য, মৈত্রী, প্রেমের কথা প্রচুর বলেন, দল নির্বিশেষে একটি মানুষ সম্পর্কেও তাঁরা উদার, নিরপেক্ষ নন। কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের কাছে এখন সত্যের চেয়ে সুযোগের দাম বেশী হয়ে পড়েছে।

সর্বভূতে তিনি বিরাজ করছেন— এ মানুষ যত জানে, ততই সে সুন্দর, সত্যনিষ্ঠ, উদার, নিরপেক্ষ হয়।

বিরাট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন আমরা নানা ভেদের পীড়ায় ভুগছি-পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, দেশে খুনোখুনির রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শিক্ষিতসমাজে যদি অধ্যাত্মচেতনা না জাগে, সনাতন আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যদি আমরা জীবনযাপনে ব্রতী না হই— তা হলে আরও অনেক— অনেক বড় ধ্বংস আসন্ন।

কোনদিন নিজেকে কোনো প্রশ্ন করে দেখেছো? তুমি কতটুকু খাঁটি? কি কি অন্যায় কাজ সারাদিন করেছ আর কি কি কাজ করোনি যা তোমার করা উচিত ছিল?
আমার কাছে নানা সত্য-মিথ্যা কথা বলতে পারো, আমি কিছুই বলি না। কিন্তু একাকী রাত্রে কখনো নিজেকে এসব প্রশ্ন করে দেখেছো কি?
আত্মজিজ্ঞাসা, যত আত্মজিজ্ঞাসা করবে তত খাঁটি হবে। মন থেকে একে একে সব প্রশ্নের জবাব পাবে।
তখন কোনো সাক্ষী থাকবে না। যতদিন পর্যন্ত নিজেকে নিজে জানবার আগ্রহ না জন্মাচ্ছে— ততদিন বুঝবে কি করে তোমার সাধনপথে অগ্রগতি হচ্ছে কিনা।
ওহে, আত্মসমালোচনা একমাত্র উপায়। নিজের প্রতিটি কাজের সমালোচনা কর, এটা অভ্যস্ত হয়ে গেলে দেখবে কোন অন্যায় কাজ করতে পারবে না।
তখন অসত্য চিন্তা মনে এলেই ভিতর থেকে বাধা পাবে।

আমাদের জীবনে দুঃখের একটি মহৎ ভূমিকা আছে।
দুঃখের অগ্নিতে আমরা জীবন ও ভুবনকে দেখি,
পাশের মানুষকে চিনি। আমরা লাভ করি সত্য দৃষ্টি।
দুঃখের আলোতেই দুঃখ থেকে পরিত্রাণের পথ পাই খুঁজে। ঈশ্বরের দিকে তখন তাকাই, তাঁকে বুঝতে শিখি।

একজন মানুষের কাছ থেকে আমরা কতটুকু পেতে পারি? সে নিজেই অপূর্ণ, অজস্র তার অভাব।

মাটির ঘটে কত ছিদ্র থাকে— যা দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে তলিয়ে যায় তার আশা, আয়ু, আনন্দের সংগ্রহ —জরায় জীর্ণ হয়ে ধুলোর মতো ঝরে জীবন —জীবনের স্বপ্ন, সাধ।
দুঃখের দিনে বুঝি অন্তঃসার হীন শক্তিকে; মুখোশ পরা বন্ধুদের মায়া সহানুভূতি অকালে যায় মরে, ছদ্মবেশ পড়ে খসে। ঈশ্বরের কাছে সর্বপ্রাণে অনুভব করি শক্তি প্রার্থনার প্রয়োজন। দুঃখ দুর্ভাগ্যের দূত নয়, কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে তার পশ্চাতে।
দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাবার পথ খুঁজে খুঁজে একদিন মানুষ সত্যের সিংহদুয়ার এ গিয়ে পৌঁছায়।
আগুনে আবর্জনা পুড়িয়ে ছাই করে কিন্তু সোনাকে করে উজ্জ্বল, —অনিন্দ্য ভাস্কর্যে গড়া অলংকার।
তিনি তাঁর চিহ্নিত জনকে দুঃখের আগুনে পুড়িয়ে অমল করেন সুন্দর করেন।
জড়ের বন্ধনকে দগ্ধ করে জীবনকে দেন মুক্তি। বড় জীবন বড় দুঃখ দিয়ে হয় গড়া।
এদের জীবনের ভেতর দিয়ে দুঃখের মঙ্গল মূর্তি কে সহজে দেখা যায়। একটি মহৎ জীবন এর মাধ্যমে অসংখ্য জীবনের সঙ্গে হই মিলিত। আমরা অফুরন্ত অভিজ্ঞতার পাই আলো —অশেষ আনন্দ-বেদনার পাই পরিচয়।
অমল মুক্তির আলো ফেলে দুঃখের কল্যাণ রূপকে যায় চেনা। কেউ যদি পঙ্গু হয়, অথবা কঠিন ব্যধিতে ঘটে কোন অঙ্গহানি, অক্ষম হয় অর্থ উপার্জনে, অবরুদ্ধ হয় তার সংসার চলার পথ, সকল দুয়ারে করাঘাত করে করে মানুষ যখন সংসারে কোথাও একটু আশ্রয় ভূমি খুঁজে পায়না, —শেষে তার দুয়ারে এসে পৌঁছায়। শূন্য হাতে তিনি কাউকে বিদায় দেন না।
কখন দুয়ার খুলে তাঁর আশ্চর্য আবির্ভাব ঘটবে, শুধু তার জন্য তাঁর অঙ্গনে অপেক্ষা করতে হয়।
এই জেগে থাকার সাধনায় যদি ছেদ না পড়ে, তাহলে আর দশ ঘরে তাকে মেগে ফিরতে হয় না। তিনি যা দেন, সংসার কোনদিন তা দিতে পারে না।

শ্রীমৎ স্বামী পরমানন্দ সরস্বতী মহারাজ

ভারতের সাধক ও সাধিকা