একশ’ একুশ বছর আগের কলকাতা। চৌরঙ্গি অঞ্চলে তখন অনেক ফাঁকা। রাস্তাঘাটও নতুন। ১৯০৩ সালে একদিন লোকজন অবাক হয়ে দেখল একটা অদ্ভুত জিনিস বেশ জোরে ছুটে চলেছে ধর্মতলার দিকে। একটা গাড়ি। কিন্তু তাতে চারটে চাকা লাগানো। সম্পূর্ণ ঢাকা। ভেতরে সামনের আসনে বসে এক সাহেব একটা চাকার মত কী যেন ঘোরাচ্ছে। ঘরঘর আওয়াজ করতে করতে গাড়িটা ছুটে চলেছে। মাঝে মাঝে পোঁ পোঁ করে হর্ণ বাজছে। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক ভদ্রলোক বিজ্ঞের মত বললেন, ‘এর নাম মটর গাড়ি। এটা হাওয়ায় চলে। বিলেত থেকে এয়েচে।
১৮৯৫ সালে ফ্রান্সের ডেইমলার মোটর কোম্পানির প্রতিনিধি কলকাতায় এসে ম্যাজিক লণ্ঠনে রঙীন ছবি দেখিয়ে মোটরের নানারকম সুবিধের কথা বুঝিয়ে দিলেন। এর পরের বছরে অর্থাৎ ১৮৯৬ সালে কলকাতার পথে প্রথম মোটর দেখা গেল প্রাথমিক অবস্থায়। প্রথম দিকে মোটরের ইঞ্জিন, টায়ার সবকিছুই আসত বিলেত থেকে। এখানে বিখ্যাত গাড়িওয়ালা স্টুয়ার্ট আর ডাইকস্ সেই সব জিনিস দিয়ে ঘোড়ার গাড়ির নকসায় মোটরের বডি তৈরি করত। ১৯২৫ সালে সারাভারতে মোটর ছিল তিরিশ হাজার। এর মধ্যে বেশির ভাগই ব্যাক্তিগত গাড়ি। ১৯০৫ সালে ৮ ঘোড়ার শক্তি বিশিষ্ট এক সিলিন্ডারের একটা রোভার গাড়ির দাম ছিল ছত্রিশশ’ টাকা। ১৯০৭ সালে কলকাতায় ভারতের প্রথম মোটর প্রদর্শনী লেডি মিন্টো মোটর একজিবিশন হয়। ১৯০৫ সালের একটা বিজ্ঞাপনে কলকাতায় মোটরকে জনপ্রিয় করবার জন্যে ঘণ্টায় ৩৫ মাইল গতিসম্পন্ন সাত ঘোড়ার শক্তি বিশিষ্ট ওল্ডস মোবাইল আর উলসলি গাড়ি হায়ার পারচেজ পদ্ধতিতে বিক্রির কথা জানা যায়। ১৯০৯ সালে ভারতে মোটরগাড়ি আর মোটর সাইকেল আমদানি হয়েছিল তিনলক্ষ দশহাজার পাউণ্ডের। কলকাতায় বাস চালানোর কাজে উদ্যোগ নেয় দু’টি কোম্পানি—অ্যাংলো ইণ্ডিয়ান মোটর ক্যাব কোম্পানি আর মেসার্স ব্র্যানডেলস্ কোম্পানি। ১৯০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হল অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল। এই অ্যাসোসিয়েশন ১৯০৮ সালে কলকাতায় বাস চালাননি, চালিয়েছিলেন ট্যাক্সি। খুব মজার কথা–তখন গ্র্যাণ্ড হোটেলের সামনে ছিল কলকাতার একমাত্র ট্যাক্সি স্ট্যাণ্ড। কলকাতায় নিয়মিত বাস চলতে শুরু করে ১৯২৯ সালে। প্রথম বাস চলেছিল আপার সার্কুলার রোড দিয়ে। কোন বিদেশী কোম্পানি কিন্তু বাস চালায়নি। বাস চালিয়েছিলেন একজন মুসলমান ব্যবসায়ী আবদুল সোবহান। শ্যামবাজার-কলেজ স্ট্রীট বীবাজার ডালহৌসি রুটে প্রথম বাস চালায় ওয়াল ফোর্ড কোম্পানি।
সংগৃহীত
https://slotbet.online/