আজ শ্রদ্ধেয় অটল বিহারী বাজপেয়ী জীর পঞ্চম বার্ষিক তিরোধান দিবস উপলক্ষে, “কিছু স্মৃতি, কিছু কথা” ।
জন্মঃ- ২৫ শে ডিসেম্বর ১৯২৪ ।
তিরোধান / পরোলোক গমন :- ১৬ ই আগষ্ট ২০১৮ ।
জন্মস্থানঃ- মধ্যপ্রদেশ-এর, গোয়ালিয়র জেলার, সীতাপুর গ্রামে।
পিতাঃ- কবি ও সাহিত্যেক শ্রদ্ধেয় কৃষ্ণ বিহারী বাজপেয়ী।
মাতাঃ- শ্রদ্ধেয়া কৃষ্ণা দেবী।
পিতামহঃ- সংস্কৃত পন্ডিত শ্যামলাল বাজপেয়ী।
প্রপিতামহঃ- পন্ডিত কাশীপ্রসাদ বাজপেয়ী।
আদি নিবাসঃ- আগ্রা শহর থেকে ২০ কিঃমিঃ দূরে যমুনা নদীর পাড়ে অবস্থিত প্রাচীন প্রসিদ্ধ
” বটেশ্বর গ্রাম “।
ভাইঃ- (চার ভাই) অবোধ বিহারী, সদা বিহারী, প্রেম বিহারী এবং অটল বিহারী।
বোনঃ- (তিন বোন) বিমলা, কমলা, উর্মিলা।
শিক্ষাঃ-
গোয়ালিয়র এর ” গোরখী প্রাথমিক বিদ্যালয় “।
ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
উক্ত বিদ্যালয় থেকেই ইন্টার পরীক্ষায় পাশ করেন। বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শেণীতেই প্রথম স্থান অধিকার করতেন অটলজী।
ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে ( 1st Class) উত্তীর্ণ হন।
উচ্চশিক্ষা গ্রহনের জন্য কানপুরের ” ডি,এ,ভি কলেজে ভর্ত্তি হন। উক্ত কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এম,এ পাশ করেন। একই সাথে আইন পাশ করেন। (ঐ সময় এক সাথে দুইটি বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল)।
অটলজীর পিতা অধ্যাপনা থেকে অবসর নেওয়ার পর,অটলজীর সাথে একই বছর আইন পাশ করেন।
বক্তাঃ-
উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন এবং পুরস্কার পেতেন।
কলেজে পড়ার সময়ে গোয়ালিয়র শহরে একজন দক্ষ বক্তা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
কানপুর কলেজে পড়ার সময় বক্তা হিসাবে ছাত্র-শিক্ষকেদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্রদের নিকট জনপ্রিয়তার কারনে, ছাত্র সংঘের বিভিন্ন কর্মসুচীতে অংশ গ্রহন করতে হতো এবং যোগ্যতার সাথে নেতৃত্ব দেওয়ার কারনে ছাত্র সংঘের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।
RSS এ যোগদানঃ-
কানপুর ডি,এ,ভি কলেজে পড়া কালীন, কলেজ হোস্টেলের পাশের ঘরের এক বছরের জুনিয়র শিক্ষার্থী, সংঘের স্বংয়সেবক প্রয়াত এ,এস,খান্নার সাথে পরিচয় সুত্রে ১৯৩৯ সালে সংঘের শাখায় যোগদান করেন এবং নিয়মিত কলেজ শাখার বিভিন্ন কার্য্যক্রমে অংশ গ্রহন করতেন।
রাজনীতিতে যোগদান :-
১৯৫১ সালের ২১ শে অক্টোবর ভারতকেশরী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী “ভারতীয় জনসংঘ” প্রতিষ্ঠার সময় RSS থেকে যে কয়েকজন স্বয়ংসেবককে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছিল, অটলজী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।
রাজনৈতিক দ্বায়িত্ব:-
ড. মুখার্জী-র ব্যাক্তিগত সচিব ছিলেন। উত্তর প্রদেশের দ্বায়িত্ব সামলেছেন। ভারতীয় জনসংঘের সভাপতির দ্বায়িত্বও সামলেছেন।
১৯৮০ সালের ৬ই ডিসেম্বর দিল্লীতে “ভারতীয় জনতা পার্টি” গঠিত হয় এবং অটলজী প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসাবে দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে বিজেপি-র সভাপতি নির্বাচিত হন।
পরিষদীয় রাজনীতি :-
১৯৫৭ সালে উত্তরপ্রদেশ এর বলরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩২ বছর বয়সে সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৫৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পয্যন্ত পরিষদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছেন। মাত্র দুইবার লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন, প্রথমবার ১৯৬২ সালে এবং দ্বিতীয়বার ১৯৮৪ সালে।
১৯৬২ এবং ১৯৮৪ সালে রাজ্য সভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন সংসদের বিরোধী দলনেতা ছিলেন।
১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পয্যন্ত বিদেশ মন্ত্রী ছিলেন।
১৯৯৬ সালে সর্ববৃহৎ দলের পরিষদীয় নেতা হিসাবে রাষ্টপতির আহ্বানে অটলজী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন এবং ১৩ দিন পর সংসদে আস্থা প্রস্তাবের জবাবী ভাষনের পর পদত্যাগ করেন।
১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১১ই মে পরীক্ষামুলক ঐতিহাসিক পরমাণু বিস্ফোরন করেন। এরপর শক্তিধর রাষ্টগুলো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, আমদানি-রপ্তানির বন্ধ করে দেয়, তথাপি অটলজীকে দমানো যায় নাই। চুড়ান্ত পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটান একদিন বাদে ১৩ ই মে ১৯৯৮ সালে।
সংসদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে মাত্র এক ভোটের জন্য অটলজী হেরে যান। অনৈতিক ভাবে ঐ ভোটটি দিয়েছিল ওড়িষার কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী গিরিধারী গোমাঙ্গ।
১৯৯৯ সালে তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন এবং পুরো মেয়াদ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
স্বর্ণভুজ, চর্তুভুজ এবং গ্রামকে শহরের সাথে যুক্ত করার জন্য সড়ক যোজনা তৈরী, বিশ্বব্যাংক এবং IMF এর ঋণ শোধ করে বন্ধকী সোনা ভারতবর্ষে ফিরিয়ে এনেছিলেন, অর্থাৎ ভারতবর্ষকে ঋণমুক্ত করেছিলেন অটলজী। বৈদেশিক মুদ্রার বিপুল ভান্ডার গড়ে তুলেছিলেন। কারগিল যুদ্ধ বিজয়ী হয়েছিলেন।
২০০৮/৯ সাল থেকে শারিরিক অসুস্থতার জন্য রাজনীতি থেকে অবসর নিতে বাধ্য হন অটল জী।
২০১৫ সালে অটলজীর রাষ্টের সর্বোচ্চ নাগরিক সন্মান “ভারতরত্ন” প্রাপ্তি হয়।
১৯৯২ সালে পদ্মবিভুষন প্রাপ্তি হয়।
২০১৮ সালের ১৬ ই আগষ্ট বিকালে ৫.১৫ মিনিটে ইহধাম ত্যাগ করে অমৃতলোকে পারি দেন।
১৭ ই আগষ্ট দিল্লীর রাজপথে লক্ষাধিক জনতা অশ্রুসিক্ত নয়নে যুগান্তকারী রাজনৈতিক নেতা অটল বিহারী বাজপেয়ী জীর অন্তিম যাত্রায় অংশ গ্রহন করেন। জয়তু অটলজী, শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো।
বিদ্যুৎ বিশ্বাস