অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়মিত ট্রামের নির্দিষ্ট রুটে টালিগঞ্জ যাওয়া-আসা করতেন শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষায়।
সে বছর বর্ষার সময় ভানু মোট চারবার ছাতা হারিয়ে ফেলেন এবং নিশ্চিত হন যে, ট্রামেই যাওয়া আসার সময় তার শেষ ছাতাটি খোয়া গেছে বা অন্য কেউ নিয়ে গেছে।
এক বর্ষায় চারটে ছাতা হারানোয় ভানু বিমর্ষ ও স্ত্রীর ভর্ৎসনায় জর্জরিত হয়ে ভাবতে থাকলেন কি করা যায়।
রবিবার বিকেলের চা ও সিগারেট শেষ করার পর ভানুর ললাট-রেখা কিছু প্রসারিত হলো, মুখমন্ডলে প্রশান্তির ছায়া পড়ল।
বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শুধু স্ত্রীকে বললেন, জীবনে যত ছাতা হারিয়েছি তার চেয়ে বেশি ফিরিয়ে আনবো আজ থেকে তিন দিনের মধ্যে।
ভানুর স্ত্রী অবাক চোখে তার স্বামীর পরিবর্তিত চেহারা ও কন্ঠে আস্থা দেখলেন, শুনলেন এবং মনে মনে ভাবলেন, বোধহয় তিনি ছাতা হারানোর চেয়েও উদ্ভট কিছু করতে উদ্যোগী হয়েছেন।
রাতে ভানু ফিরে এলেন।বিশেষ কথাবার্তা বললেন না।
সোমবার যথারীতি কাজে গেলেন,এবং, ফিরেও এলেন। কিন্তু তেমন উল্লেখযোগ্য কিছুই ঘটলো না। বরং, ভানুকে একটু চিন্তিতই মনে হলো।
মঙ্গলবার সকালে শ্রীমতি ভানু ঘরের দরজা খুলে হতবাক!
বাসার সামনের উঠোনে একরাশ ছাতা পড়ে আছে! কমপক্ষে আশি-নব্বইটা হবে!
বিভিন্ন রকমের ছাতা : কাঠের ডাঁটিওয়ালা, স্টিল ডাঁটিওয়ালা, বন্ধ ও ছোট করা যায় এমন কালো, ফুল ফুল, নানান ধরণের! চিৎকার করে কর্তাকে ডেকে তুললেন।
“কইগো, ওঠো, ওঠো, তোমার কথা ফলে গেছে।আমাদের উঠানে শুধুই ছাতা আর ছাতা! কি করে এ অসম্ভবকে সম্ভব করলে তুমি!?”
ভানু হাই তুলতে তুলতে বললেন “কইছিলাম না জীবনে যতো ছাতা হারাইছি সব আনুম আর আরো বেশি আনুম, তুমি তো বিশ্বাসই করলা না।”
আশপাশের বাড়ির লোকজনও উৎসুক হলো যে কি ব্যাপার, কি ভাবে এলো এত ছাতা!
ভানু ব্যাখ্যা করলেন।
“প্রতি বছরই বর্ষায় আমার একটা দুইটা ছাতা হারায়। এইবার হারালো চারটি। বর্ষার এখনো বাকি এক মাস। বৌ-এর বকাঝকা শুনে বিরক্ত হয়ে ভাবতে বসলাম কি করা যায়। সারা জীবনে প্রায় ত্রিশ-চল্লিশটা ছাতা হারিয়ে ফেললাম। সত্যিই, বৌ এর তো রাগ করারই কথা। ভেবে চিন্তে একটা ফন্দি আঁটলাম।
রবিবার সন্ধ্যায় গিয়ে ছোট একটা বিজ্ঞাপন ছেপে দিলাম যা এইরকম :
‘আমি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, ১২/১ সরকার স্ট্রিট, গোল পার্ক, কলকাতায় থাকি এবং নিয়মিত কাজে ১২ই নম্বর ট্রামে যাতায়াত করি ।আমি আনুমানিক গত ৭ দিনের মধ্যে দুটি ছাতা হারিয়েছি এবং যারা এ দুটো ছাতা নিয়েছেন তাদের আমি চিনি। যদি আগামী ৩ দিনের মধ্যে এগুলো ফেরত না দেন তাহলে আগামী রবিবার এই পত্রিকায় তাদের নাম-ঠিকানা সব ছেপে দেবো।’
ব্যাস, এতেই কাজ হয়ে গেল!”
এখন বুঝুন, কলকাতায় তখন বর্ষায় যারা ছাতা মাথায় দিয়ে চলতেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছাতাটি তাদের নয়।
https://slotbet.online/